ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কম সহিংসতায় সন্তোষ প্রকাশ

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পেছনে খরচের টাকা চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসির না
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কম সহিংসতায় সন্তোষ প্রকাশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, নির্বাচনে ভোট গ্রহণকাল এবং পরবর্তীতে সম্ভাব্য সহিংসতা কম হয়েছে বলে মত দিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম)। মার্কিন এই সংস্থাগুলো বলছে, দ্বাদশ ভোটে সহিংসতা কম হলেও নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় গুণগত মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তবে ভোট নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন বিদেশিরা।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালে ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনি সহিংসতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আসা এনডিআই এবং আইআরআই টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) গতকাল তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই ও এনডিআই’র তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীজনদের কাছে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মিশন সদস্যরা অবগত হয়েছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে, পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে। এটি হয়েছে প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনি প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেওয়ায়। তবে তা সত্ত্বেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে যেসব ঘটনার কারণে তা হলো- রাষ্ট্র, শাসক দল এবং বিরোধীদের সহিংসতা, সেইসঙ্গে একটি প্রাক-নির্বাচন পরিবেশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় শূন্য-সমষ্টির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং বাকস্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতি।

এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরো শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে নেতাদের নির্বাচনি রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।’

আইআরআই’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে টিএএমণ্ডএর স্বীকৃত পাঁচজন দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষক নির্বাচন ও সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এই মিশনটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে, যা এনডিআই এবং আইআরআই ৮ থেকে ১১ অক্টোবর, ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালনা করেছিল। পিইএএমণ্ডএর পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়নের কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

আইআরআই এবং এনডিআই হলো- নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা, যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করে। ইনস্টিটিউটগুলো গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। জানা যায়, সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৪, জাতীয় পার্টি ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য খরচ বাবদ নির্বাচন কমিশনের কাছে এক কোটির মতো টাকা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা অতিথিদের যাতায়াতের গাড়ি ভাড়ার টাকা দেবে। বাকি খরচের দায় তারা নেবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের হোটেলে অবস্থান, আতিথেয়তা, কন্ট্রোল ও ব্রিফিং রুম স্থাপন, যাতায়াত, ভ্রমণ ও আপ্যায়নসহ অন্যান্য খাতের খরচ বাবদ ৯৮ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৫ টাকা চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল। তাদের চাওয়া অর্থের মধ্যে রয়েছে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান ও আতিথেয়তা বাবদ ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৯৭৪ টাকা; ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে কন্ট্রোল রুম, ব্রিফিং রুম, মিডিয়া রুম স্থাপন, খাবার ও অন্যান্য বাবদ ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৪২৪ টাকা; ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে এয়ারপোর্টে বলাকা লাউঞ্জে খাবার সরবরাহ ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৬৫ টাকা; গাড়ি ভাড়া ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৩ টাকা; ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭২ জন স্বেচ্ছাসেবক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৫ জন স্বাগতিক কর্মকর্তাসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাবারসহ প্রশিক্ষণ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং অন্যান্য সভার আপ্যায়ন বাবদ ২২ লাখ ৫০ হাজার ১০৮ টাকা; ৭২ জন স্বেচ্ছাসেবকের সম্মানি (দিন হিসেবে ৬১২) ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং স্থানীয় বিমান টিকিট ৫৬ হাজার ৩৯০ টাকা; বিবিধ ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮১ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা তাদের চিঠি পর্যালোচনা করছি। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অতিথিদের জন্য গাড়ি ভাড়া করতে বলেছিলাম। সেই গাড়ি ভাড়া বাবদ যে টাকাটা আসে সেটা আমরা দেব। অন্য কোনো খরচ আমাদের নয়। এটা যারা খরচ করেছে তারাই মেটাবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত