উৎকণ্ঠা কমছে না জলদস্যুদের কবলে থাকা জাহাজ নিয়ে

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে থাকা জাহাজটি এখনো উদ্ধার হয়নি। তারা মালিকপক্ষের সাথে এখনো পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেনি। জানা যায়, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে যাচ্ছিল। ১৯ মার্চ সেই বন্দরে কয়লা খালাসের কথা ছিল। কিন্তু হামরিয়াহ বন্দরে যাওয়ার পথেই গত মঙ্গলবার সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি, জিম্মি করা হয় ২৩ নাবিকসহ কয়লাভর্তি পুরো জাহাজটি। জলদস্যুদের কবলে পড়ার সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু উপকূল থেকে ৬৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে, ভারত মহাসাগরে। জাহাজটি ভারত মহাসাগরের যে পথ পাড়ি দিচ্ছিল তা ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ কিংবা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কোনোটিই ছিল না। আবার জাহাজ চলাচলের নিয়মিত পথও ছিল না এটি। সেই পথে দস্যুতা প্রতিরোধে ছিল না কোনো আন্তর্জাতিক টহল বাহিনী। ফলে সোমালিয়ার দস্যুরা কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিরোধ ছাড়াই ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে নিজেদের কবজায় নিতে সক্ষম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে সেই এলাকায় দস্যুতা প্রতিরোধে সাগরে টহল বাহিনী না থাকা। অন্য দুটি কারণ হচ্ছে, জাহাজটির গতি কম থাকা এবং জাহাজের ড্রাফট বেশি থাকা ও জাহাজে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকা। জাহাজটি যে পথে ভারত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছিল, সেই এলাকায় নিরাপত্তা টহল না থাকার একটি বড় কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্রপথে নিরাপত্তা দেওয়া আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলোর এখন মূল দৃষ্টি পাশে থাকা লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের ঠেকানো। সব আন্তর্জাতিক বাহিনী সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার কারণেই এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর সেই সুযোগটিই নিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, নৌ সার্ভেলেন্স বাড়ানোর কারণে ভারত মহাসাগরের এই পথে জলদস্যুতা অনেক কমে এসেছিল। নভেম্বর থেকে সেটি আবার বাড়তে শুরু করে। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ ও হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে লোহিত সাগর এখন হটস্পট। ফলে সাগরে নিরাপত্তা দেওয়া বিদেশি বাহিনীর মনোযোগ, নেভাল সার্ভিলেন্স লোহিত সাগরের দিকে বেড়ে গেছে। এই সুযোগটা সোমালিয়ান জলদস্যুরা কাজে লাগাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে।

পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কাজ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী বা ইইউন্যাভ ফর আটালান্টা। তাদের হিসাবে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সোমালিয়া উপকূলে অন্তত ১৪টি জাহাজ ছিনতাই করা হয়েছে। গত তিন মাসে ভারত মহাসাগরের এই পথে জাহাজ ছিনতাই ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে, বলছে রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট। এ কারণে এই পথ পাড়ি দেওয়ার সময় অবশ্যই বাড়তি সতকর্তা নেওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করছেন মেরিটাইম সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি জাহাজে যখন জলদস্যুরা আক্রমণ করে, তখন তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করে। প্রথমে ফিশিং বোটে করেই মাছ ধরার নাম করে তারা সাগরে থাকে। নির্দিষ্ট জাহাজকে টার্গেট করে ফিশিং বোট থেকেই ছোট ছোট জাহাজে করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টার্গেট জাহাজের কাছাকাছি যায়। চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং দ্রুত জাহাজের ডেকে উঠে নাবিকদের জিম্মি করে ফেলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাহাজটি পণ্য দিয়ে অতিমাত্রায় লোডেড থাকার কারণেই এর গতি ছিল কম। একই কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর ডেকের উচ্চতাও অনেক কম ছিল।

ফলে জাহাজটি এত পণ্য ভর্তি করে কেন যাত্রা শুরু করল, সেই প্রশ্নও এখন উঠছে। তবে জাহাজটির মালিকপক্ষ বলছে, জাহাজটি কেন দস্যুদের কবলে পড়ল সেটি নিয়ে তারা এখন ভাবছেন না। তাদের মূল ভাবনা এখন জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা।