ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাবেক প্রক্টরের অবহেলায় অবন্তির আত্মহত্যা

ফাঁসছেন দ্বীন ইসলাম
সাবেক প্রক্টরের অবহেলায় অবন্তির আত্মহত্যা

‘দীর্ঘদিন যাবৎ (১৪) ব্যাচের আমারই বিভাগের আম্মান সিদ্দিকী আমার সাথে হয়রানিমূলক আচরণ ও উত্ত্যক্ত করে আসছে। প্রথম বর্ষে প্রেমের প্রস্তাব করলে তা প্রত্যাখ্যান করলে সে ব্যক্তিগত জীবনে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার কিছুদিন পরই আমাকে দেখে সে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লিল মন্তব্য করে এবং আমি এরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদ করায়ই বিপত্তি বাধে। সে অপমানিত বোধ করে এবং আমাকে বলে, আমার একদিন এমন অবস্থা করবে বা এমনভাবে ফাঁসাবে আমাকে, যাতে আমি মেয়ে হয়ে সমাজে মুখ দেখাতে না পারি এবং সুইসাইডে বাধ্য হই। অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, প্রতিবাদ করলে আম্মান বলে, আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে, দেখি কী করতে পারস। তুই জানস কোতোয়ালি থানায় আমার কেমন লিংক? এক সেকেন্ড লাগবে তোকে ফাঁসাতে।’ - প্রক্টর অফিসে দেওয়া ফাইরুজ অবন্তিকার অভিযোগপত্র এমনটাই ছিল। কিন্তু এ অভিযোগ প্রক্টর অফিসেই আটকে থাকে। পূর্বে অবন্তির বিরুদ্ধে তার সহপাঠীরা যে অভিযোগ করে এবং জিডি করে, তা সমোঝোতা করা হয় তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালের মাধ্যমেই। অবন্তিকার সর্বশেষ অভিযোগের ওপর হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি। নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। তিন মাস আগে অবন্তি যে অভিযোগ করে, সেটা শুধু প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালই জানতেন। অবন্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াই সাবেক প্রক্টরকে দুষছেন অবন্তির সহপাঠীরা। তাদের দাবি, অবন্তির শেষ অভিযোগ আমলে নিলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সাবেক প্রক্টর বলেন, অবন্তিকা একটা অভিযোগ দিয়েছিল নভেম্বর মাসে। পরে তাকে ডাকানো হলে সে আর যোগাযোগ করেনি। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময় আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী দেখা না করলে কি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না- এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, আমলে নেওয়া হয়। কিন্তু এর আগে এ অভিযোগের একবার মীমাংসা হয়েছিল বলে সরাসরি তার বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। সে আর যোগাযোগ করেনি।

অবন্তির শেষ অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আগের ঘটনায় তদন্তকারী গৌতম কুমার সাহা। গতকাল শনিবার দ্বীন ইসলাম বলেন, অবন্তিকার বিরুদ্ধে তার সহপাঠীরা যে অভিযোগ করে এবং জিডি করে, তা সমোঝোতা করা হয় সাবেক প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল স্যারের মাধ্যমেই। এরপর থেকে আমি আর কিছু জানি না। অবন্তিকা ও তার পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিন মাস আগে কী অভিযোগ করেছে অবন্তি, সেটাও জানানো হয়নি প্রক্টর অফিস থেকে।

শেষ অভিযোগের ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়নি বলে জানান গৌতম কুমার সাহাও। তিনি বলেন, আগের ঘটনা নিষ্পত্তি হয়ে গেছিল এরপর আর কিছু জানানো হয়নি।

অবন্তিকার অভিযোগের বিষয়ে তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি আইন বিভাগের। শুধু সুপারিশ করেই ক্ষ্যান্ত ছিল আইন বিভাগ। যদিও তার দাবি তিনি এরপরও একাধিকবার অবন্তিকার কাছে খোঁজখবর নিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আত্মহত্যার আগের দিনও তার সাথে আমার বিভাগে কথা হয়েছিল। আমি জানতে চেয়েছি তার কেনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। সে জানিয়েছে সব কিছু ঠিকঠাক আছে।

সাবেক প্রক্টরের অবহেলার বিষয়ে চেয়ারম্যান আক্কাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টরের কাছে দায়ের করা অভিযোগ যে কোনো তদন্ত হয়নি, এটা আমার জানা ছিল না। অবন্তির বিষয়ে প্রক্টর অফিসে থেকেও আর কিছু বলেনি পরবর্তীতে আমাদের। কোনো চিঠিও দেয়নি অফিশিয়ালভাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত