সাকিবের বিএনএমে যোগদান

আবার বিতর্কে জড়াল আ. লীগ-বিএনপি

সাফাই গাইলেন ওবায়দুল কাদের ও মেজর হাফিজ

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক আগে শেষ হলেও এ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শেষ হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিএনএমে যোগদান-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করার জন্য সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে তারা সফল হয়নি। অথচ বিএনপির এক নেতা এ কাজে সহায়তা করেছেন। তারা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা কাজে লাগিয়েছে সরকার। এদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, যেজন্য যার যেখানে ইচ্ছে তিনি যেতে পারেন। আওয়ামী লীগ স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দল। কে কোন দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি খ্যাত বিএনএমতে যোগদানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমি বিষয়টি মিডিয়ায় দেখেছি। এ সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিল না। তিনি বলেন, এখন সাকিব আওয়ামী লীগের টিকিটে মাগুরা থেকে নির্বাচন করেছে, জয়লাভও করেছে। মনোনয়ন বোর্ডের কাছে যাওয়ার সময় সে দলের প্রাথমিক সদস্য ছিল। তার আগে তো সাকিব আমাদের দলের কেউ ছিল না। নমিনেশন দেওয়ার সময় প্রাথমিক সদস্য পদ দিতে হয়। এর আগের বিষয়টা জানি না।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিংস পার্টির সৃষ্টি নিয়ে সরকারের ভূমিকা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারি দল কিংস পার্টি করতে যাবে কেন? নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের এখানে অনেক ফুল ফোটে। কোনটা কিংস পার্টি, কোনটা প্রজা পার্টি এ সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই। আমরা প্রত্যেককে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখি। নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন দেয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা ক্লান্ত, কর্মীরা হতাশ। এ অবস্থায় গালিগালাজ করা ছাড়া তাদের করার কিছু নেই। দলটি এখন ইফতার পার্টির নামে সরকারের অন্ধ সমালোচনা করছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিকে ভাঙার অভিযোগ নিয়ে এক বিএনপি নেতার বক্তব্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে আমরা কেন ভাঙতে যাব? আমাদের কি কোনো দুর্বলতা আছে, যে বিএনপি থেকে লোক এনে সে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের বহু লোক। গত নির্বাচনে দেখেছেন প্রার্থিতা ফরম নিতে কত ভিড়। আওয়ামী লীগে কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মানদ- নিয়ে মার্কিন নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদন বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে আমাদের একটা মানদ- আছে। পৃথিবীর কেউ পারফেক্ট নয়। আমরাও সেই দাবি করি না। আমেরিকার এক সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছেন ‘আমি নির্বাচিত না হলে রক্ত বন্যা বয়ে যাবে।’ এটা কোন গণতন্ত্র? নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সাবেক প্রেসিডেন্ট আজ পর্যন্ত মেনে নেয়নি। কাজেই মানদ- বোঝা মুশকিল। আমাদের দেশে ২১ বছর সামরিক শাসক এবং তার অনুসারীরা ক্ষমতায় ছিল। দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ছিল না। গণতন্ত্রের নামে যারা ক্ষমতায় বসেছে তারা ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা প্রহসনের নির্বাচন করেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হ্যা না ভোট আরেকটা প্রহসন। যারা ওয়ান ইলেভেনের সময় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য। সেখান থেকে অস্বাভাবিকভাবে সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থেকেছে। কাজেই আমাদের মানদ- ভিন্নতর।

এদিকে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবি নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে নানান ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

হাফিজ বলেন, ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর অপচেষ্টা এ সংবাদে লক্ষ্য করেছি। ৭৯ বছর বয়স আমার জীবন খোলা বই, গত ৩২ বছর ধররে বিএনপিতে। ৪ মাস পর এমন সংবাদ অবমাননাকর, মানহানিকর। জাতীয়তাবাদের পরিক্ষীত সৈনিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সার্ভিস দিতে চাই। নিজে খেলোয়াড় ছিলাম বলে ক্রীড়াবিদদের প্রতি দুর্বলতা আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি অত্যন্ত নোংরা, দেশে গণতন্ত্র নেই। নির্বাচনের সময় নানান কলাকৌশল গ্রহণ করা হয়। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা বিরোধীদের ভাগিয়ে এনে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। এবারও নির্বাচনের আগে ‘কিংস পার্টি’ গজিয়ে ওঠে। সামরিকবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ৩-৪ জন কর্মকর্তা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরামর্শ দেন। আমি বলেছি, সাধারণ মানুষ ছাড়া রাজনীতিতে টিকে থাকার সুযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যারা যোগাযোগ করেছে, তারা ধরে নিয়েছিল আমি বিএনপি ত্যাগ করতে উদগ্রিব।

সামরিক কর্মকর্তা নিয়ে হাফিজ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত দুজন সামরিক কর্মকর্তা বিএনএম গঠন করে, সাকিব আল হাসানকে আমার কাছে নিয়ে আসে। নির্বাচনের ৪ থেকে ৫ মাস আগে আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে সাকিব চলে যায়।

তিনি বলেন, বিএনএমণ্ডএ যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি যোগ দিইনি। এটা গোপন করার বিষয় না। সাকিব আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে, সহজে নির্বাচিত হতে নিজের পছন্দ বেছে নিয়েছে। বিএনএম’র জন্য নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে কাউকে পাঠাইনি।

হাফিজ আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম লুকিয়ে জনদৃষ্টি ভিন্নদিকে নিতে বিএনএম’র সঙ্গে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নিজেদের উচ্চাশা চরিতার্থ না হওয়ায় হতাশায় ভুগে বিষোদগার করছে।

জানা যায়, বিএনএম দলটি গঠন করার পেছনে হাত আছে হাফিজের। বিএনপির প্রতি বিক্ষুদ্ধ হন তিনি, বলেও দাবি করা হয়েছে। বিএনএম দলের নামটিও হাফিজের দেওয়া বলে দাবি। সেই দলেই যোগ দিতেই হাফিজউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে সাকিব বিএনএমের সদস্য ফর্ম পূরণ করেন বলেও দাবি করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই দলে যোগ না দিয়ে সাকিব আল হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন তিনি।