রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি ইফতারের আগে দুর্ভোগ

আধাঘণ্টা মেট্রোরেল বন্ধ

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ইফতারের আগ-মুহূর্তে রাজধানীজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়, এতে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীতে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঢাকার রাস্তাঘাট। বৃষ্টির পানি রাস্তায় লেগে থাকায় যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে নগরের ফার্মগেট, কাওরানবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার, শান্তিনগরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহনের ধীরগতি। রাস্তায় পানি জমে থাকায় যানবাহনকেও দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিল। বিমানবন্দরে বিআরটিসি বাসে করে খামারবাড়ি আসছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সৈয়দ আহম্মেদ সালেহীন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর গাড়িটি এক টানে এলেও ফার্মগেট ঢালে আধাঘণ্টা ব্রিজের ওপরে আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, মহাখালীতে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা। এদিকে এসে দেখি যানজট। ফার্মগেট নামের আগেই আমাদের বহন করা গাড়িটি আটকে যায় ব্রিজের ওপর। প্রায় আধাঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও ফাঁকা আবার কোথাও যানজট। বিষয়টা বুঝতেছি না। আরেক যাত্রী ঝর্ণা রয় বলেন, বৃষ্টি নামার ২ ঘণ্টা পার হয়ে গেল এখনো রাস্তায় পানি জমে আছে, সরছে না। রিকশা নিয়ে পানি ভেঙে চলতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের বাংলামোটরে দায়িত্বরত ট্রাফিক কর্মকর্তা (টিআই) নিউটন বলেন, বিকালে বৃষ্টির পর থেকেই রাস্তায় যানবাহনের প্রচুর চাপ। আমাদের একটু পর পরই সিগন্যাল ফেলতে হচ্ছে। সকালে রাস্তায় গাড়ির চাপ কম ছিল। মূলত বৃষ্টির কারণেই রাস্তায় যানবাহনের ধীরগতি হওয়ায় এমনটা হয়েছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর জোনের পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট সাফায়েত হোসেন বলেন, বিকালের পর বিভিন? অলিতে-গলিতে এলোমেলোভাবে ব্যক্তিগত যানবাহন প্রবেশ করায় ফার্মগেট, বিজয়সরণী ও কাওরানবাজারের দিকে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিভিন? পয়েন্ট ফাঁকা রয়েছে, যানবাহনের চাপও কম রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিকালের ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টির পর এসব এলাকার রাস্তায় রাস্তায় পানি জমে আছে। ফলে যানবাহনগুলো গতি কমিয়ে চলতে হচ্ছে। এর ফলে যানজট দেখা দিয়েছে। বিভিন? যানবাহনে থাকা যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। রাজারবাগ এলাকায় যানজটে আটকে থাকা যাত্রী জসিম উদ্দিন বলেন, বিকালের বৃষ্টির পর থেকে রাজারবাগ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যানজট, আরেকদিকে জলাবদ্ধতার কারণে গাড়ি সামনের দিকে এগোচ্ছে না। প্রায় ১ ঘণ্টা পার হয়ে গেল, অথচ গাড়ি নড়ছে না। শান্তিনগর এলাকায় যানজটে আটকা পড়া যাত্রী মো. আনোয়ার বলেন, ৪টা থেকে গাড়িতে বসে আছি। এখন ৫টা বাজতে চলল। কিন্তু যানজট কমার কোনো নামই নেই। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে এমনিতেই বিকালের দিকে যানজট হয়। কিন্তু আজ বৃষ্টির কারণে যানজটের পরিমাণ আরো বেশি। রাস্তায় পানি থাকার কারণে যানবাহন এগোতে পারছে না। বৃষ্টির পর সৃষ্ট যানজট নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইমতিয়াজ বলেন, বিকালের বৃষ্টির পর কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির শুরুতে যানচলাচল ধীরগতিতে ছিল। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর যানবাহনের চাপ আরো বাড়তে থাকে। এর ফলে বর্তমানে রাস্তায় যানজট রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বৃষ্টিতে ‘কারিগরি জটিলতায়’ ঢাকার মেট্রোরেল আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ইফতারের আগে আগে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দমকা বাতাসের সঙ্গে হালকা বৃষ্টি হয়। এরপর পৌনে ৫টার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়টায় অফিস শেষে অনেকেই ইফতারের আগে বাসায় ফেরার তাড়ায় ছিলেন। ফলে স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় জমে যায়। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত মানুষ ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেক র‌্যাপিড ও এমআরটি পাসধারীদের বের হওয়ার জন্য মেশিন ‘জিরো ব্যালেন্স’ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি যারা সিঙ্গেল ট্রিপের জন্য টিকিট কেটেছিলেন, তাদের টাকা ফিরত দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাস্টমার সার্ভিস অফিসার শরিফ সরদ বলেন, বৃষ্টি হয়েছে, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ট্রেন কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।