ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল আজ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আদলে সুষ্ঠু ভোট করতে চায় ইসি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আদলে সুষ্ঠু ভোট করতে চায় ইসি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটের পূর্ণাঙ্গ তপশিল ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। সকাল ১১টায় কমিশন সভা শেষে তপশিল ঘোষণা করা হবে। ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা ভোট সুষ্ঠু করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আজ কমিশন সভা রয়েছে, সভায় উপজেলা ভোটের তপশিল, ইভিএম ব্যবহার এবং ঝিনাইধহ-১ আসনের উপনির্বচনের তপশিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভোটের তারিখ তো আগেই জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপের পূর্ণাঙ্গ তপশিল হতে পারে বৈঠকে। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫৩টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, তৃতীয় ধাপে ১১১টি ও চতুর্থ ধাপে ৫২টি; মোট ৪৮১টি উপজেলায় ভোট করার কথা রয়েছে। আগামী ৪,১৮ ও ২৫ মে এবং ১ জুন ভোটগ্রহণ করতে চায় ইসি। এজন্য প্রথম দফা ভোটের পূর্ণাঙ্গ তপশিল হতে পারে আজ।

জানা যায, এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা নিয়ে দোটানায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোন ধাপে কোন উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আবার অনেক প্রার্থী ইসির কাছে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন। আবার অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তপশিল ঘোষণার সময় কোন উপজেলায় ইভিএম এবং কোন উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে সে তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। তবে যে উপজেলায় ব্যালটে ভোট হবে, সেখানকার কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার।

ইসিসূত্র জানিয়েছেন, ইসির হাতে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম অকেজো। সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ আসনে ব্যবহারের জন্য ইভিএমগুলো প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেনি ইসি।

সূত্র জানিয়েছেন, ইসির প্রাথমিক চিন্তায় রয়েছে একই জেলায় ইভিএম এবং ব্যালটে ভোট না করার বিষয়টি। যে জেলায় যে ধাপে ইভিএম হবে, সে জেলায় সব উপজেলায় ইভিএম। আবার যে জেলায় যে ধাপে ব্যালটে ভোট হবে ওই ধাপে ওই জেলার সব উপজেলায় ব্যালটেই ভোট হবে। এজন্য সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হবে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় জুনে। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণে ২৬ উপজেলা কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাকিদের প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক না দিলে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে উৎসাহী হবে। এর ফলে রাজনীতি করে না এলাকার এমন প্রার্থীরাও নির্বাচন করতে এগিয়ে আসবেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হবে। জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে। এর ফলে দেশে রাজনীতি ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে ফিরে আসবে স্বস্তি। সেইসঙ্গে গণতন্ত্রের ভিত্তিও আরও শক্তিশালী হবে। এদিকে উপজেলা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তৎপর। বিশেষ করে এ নির্বাচনে যেন যে কোনো প্রার্থী নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারে সেজন্য আইনের বিধিও সংশোধন করা হচ্ছে। এর ফলে এ নির্বাচনে সুযোগ বাড়ছে প্রার্থীদের। সূত্র জানায়, আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু প্রার্থীদের নির্বাচন সহজ করতে এ বিধান তুলে দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ও ইসির এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। তাই এখন অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হলেই বিষয়টি কার্যকর হবে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন পদ্ধতিকে আরও সহজ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ইসি বেশ ক’টি প্রস্তাব সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলো ভেটিং হয়ে এসেছে। এখন সেগুলো আবার দেখে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তার পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত