ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুমিনের পরকালযাত্রা যেমন হবে

মুমিনের পরকালযাত্রা যেমন হবে

মানব শিশুকে মাতৃগর্ভ থেকে মাটির পৃথিবীতে আসতে হয়েছে এক কঠিন পারাপার পার হয়ে। আত্মীয়-স্বজন মহিলারা অপেক্ষায় ছিল প্রসূতি ঘরে তাকে বরণ করার জন্য। সুস্থ দেহের সুদর্শন ছেলে সন্তান জন্ম নিলে অপেক্ষমান মহিলারা পরম আদরে কোলে তুলে নেয়। আর যদি প্রসূতি মা মানব শিশুর পরিবর্তে কিম্ভুতকিমাকার কোনো জানোয়ার সাবক প্রসব করে তাহলে অপেক্ষমান মহিলারা ঘৃণায় দূরে সরে যায়। মানুষের মৃতুর সময়ও একই দৃশ্যপটের অবতারণা হয়।

মানুষ মায়ের পেটে যেমন চিরস্থায়ী থাকতে পারেনি, এই পৃথিবীতেও চিরস্থায়ী বসবাস করতে পারবে না। তাকে চলে যেতে হবে আরেক দেশে, যার নাম বরযখের জগত, কবর জীবন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়, ফেরেশতাগণ বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা নাহল : ৩২)

তিনি আরো বলেন, ‘তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন আমার প্রেরিতরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোনো ত্রুটি করে না।’ (সুরা আনআম : ৬১)

মানুষের এই পৃথিবী থেকে বিদায় ও ওপারে বরণ করে নেয়ার দৃশ্যপটও একই রকম। মুমিন বান্দার রুহকে তখন পরম আদরে বরণ করা হয়। আর বদকারদের আত্মাকে ঘৃণাভরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মাতৃগর্ভে আমার প্রকৃত হাল হাকিকত কেমন ছিল কেউ জানি না, মৃত্যুর পরের অবস্থাও আমাদের অজানা। একমাত্র আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের বর্ণনাই আমাদের সামনে উদ্ভাসিত করতে পারে না দেখা দুনিয়ার হাকিকত।

বারা ইবনে আজেব (রা) সূত্রে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ঈমানদারদের যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পরকালের পথে যাত্রার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন উজ্জ্বল শুভ্র চেহারার ফেরেশতারা তার কাছে নেমে আসেন।

তাদের চেহারাগুলো যেন একেকটি সূর্য। তাদের সঙ্গে থাকে জান্নাতি কাফন ও জান্নাতি সুগন্ধি। তারা তার কাছে বসে পড়েন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথার পাশে বসে বলেন, ‘হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো।’

-(সূরা ফজর, আয়াত-২৭, ২৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারপর পাত্রের মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া ফোঁটার মতো তার আত্মা বেরিয়ে আসে। আজরাইল (আ.) সেই আত্মাকে বরণ করে নেন। আজরাইল (আ.) হাতে নেওয়ামাত্র চোখের পলকে অন্য ফেরেশতারা সেই আত্মা নিয়ে জান্নাতি কাফনে ও জান্নাতি সুগন্ধিতে রেখে দেন। তার থেকে মেশকের চেয়ে উত্তম সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে, যা (কখনো কখনো) জমিনেও অনুভূত হয়।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এরপর তারা সেই আত্মা নিয়ে ঊর্ধ্বারোহণ করতে থাকেন। যখনই কোনো ফেরেশতা পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন ফেরেশতাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, এটা কার পবিত্র আত্মা? তারা তার নাম উল্লেখ করে বলেন, অমুকের ছেলে অমুক।

এভাবে তারা প্রথম আসমানে পৌঁছেন। আসমানের দরজা খুলতে আহ্বান করেন। তাদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হয়। এভাবে সব আসমানের ফেরেশতারা পরবর্তী আসমান পর্যন্ত তার অনুসরণ করে বিদায় জানান। তারপর তিনি সপ্তম আসমানে পৌঁছে যান। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমার বান্দার আমলনামা ইল্লিয়্যিনে রেখে দাও এবং তাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে নাও। কোরআন মজিদের বাণী ‘নিশ্চয়ই আমি তাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তাতেই ফিরিয়ে দেব এবং তার থেকে দ্বিতীয়বার বের করে আনব।’ -(সুরা ত্বাহা, আয়াত-৫৫)

রাসুল (সা.) বলেন, তারপর তার রুহ তার দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর তার কাছে দুইজন ফেরেশতা আসেন। তারা তাকে বসান। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার রব কে? তিনি বলেন, আমার রব আল্লাহ। তারা জিজ্ঞেস করেন, তোমার ধর্ম কী? তিনি বলেন, আমার ধর্ম ইসলাম। তারা বলেন, তোমাদের কাছে পাঠানো এই লোকটি কে? তিনি বলেন, তিনি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)। তারা বলেন, তোমার জ্ঞানের উৎস কী? তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি। তার ওপর ঈমান এনেছি এবং তা সত্যায়ন করেছি। তখন ঘোষণা আসে, ‘আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। জান্নাতের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও।’

রাসুল (সা.) বলেন, এরপর তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুরভি আসতে থাকে এবং তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। এরপর একজন সুদর্শন সুন্দর পোশাক পরিহিত ও সুগন্ধিযুক্ত লোক আগমন করে বলে, আনন্দদায়ক সুসংবাদ গ্রহণ করো। এটা সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাকে দেওয়া হয়েছে। তারপর সে বলবে, কে তুমি, হে কল্যাণকামী! সে বলবে, আমি তোমার নেক আমল (অর্থাৎ নেক আমল জীবন্ত হয়ে উঠবে)।

হাদিসের বর্ণনা মোতাবেক প্রত্যেকের লাশের সাথে তিন প্রকারের সঙ্গী যায়, দুই প্রকার ফিরে আসে এক প্রকার তার সঙ্গে থেকে যায়। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির সাথে তিন প্রকারের সঙ্গী থাকে। এক প্রকার সঙ্গী মৃত্যুবরণের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেয়। সেই সঙ্গী তার ধন-সম্পদ। মৃত্যুর পরপর সম্পদের মালিকানা অন্যের হাতে চলে যায়। জানাজার পর দাফন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজন সঙ্গে থাকে। দাফনের পর আত্মীয়রাও ছেড়ে চলে আসে। সঙ্গে থাকে কেবল তার আমল।

-(বুখারী, মুসলিমের বরাতে মিশকাত, হাদিস নং-৪৯৪০) পবিত্র রমজান মাস সেই আমলের মৌসুম। পুরো জীবন যাতে নেক আমলের উপর অবিচল থাকতে পারে তার অনুশীলন হয় রমজানে। আসুন আমরা নিজেকে শুধরে নেই, সৎকর্ম ও সৎভাবে জীবনযাপনের সংকল্প গ্রহণ করি, অনুশীলন করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত