ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৯ দিন পর যোগাযোগ করল এমভি আবদুল্লাহ’র দস্যুরা

তৈরি হচ্ছে আলোচনা ও সমঝোতার সম্ভাবনা
৯ দিন পর যোগাযোগ করল এমভি আবদুল্লাহ’র দস্যুরা

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আবদুল্লাহ’র দস্যুরা যোগাযোগ করেছে। তারা দীর্ঘ ৯ দিন পর গতকাল মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করল। জানতে চাইলে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা যোগাযোগ শুরু করেছে। এখন আলোচনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, যোগাযোগ শুরু হওয়ায় এখন জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। দর-কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছালে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি মিলতে পারে। জানা যায়, নাবিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করেছে জলদস্যুরা। তারা দিন দিন কঠোর হচ্ছে। নাবিকদের জাহাজটির কম্পিউটার রুমে যেতে দিচ্ছে দস্যুরা। শুধু তাই নয়, সেখানে মজুত পানিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এ কারণে পানি ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে দস্যুরা। পুরো দিনে মাত্র দুইয়েক ঘণ্টা মজুত থাকা পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে নাবিকদের। বাকি সময়ে সাগর থেকে পানি নিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এসব তথ্য জানান চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা বদরুল ইসলাম। তিনি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি। তিনি জানান, আমার শ্যালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে রবিবার (১৭ মার্চ) কথা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে তিনি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছেন। তিনি সুস্থ আছেন। নাবিকদের সে দেশের মোবাইল সিম দেওয়ার কথা বলে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে দস্যুরা। তবে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো সিম নাবিকদের দেয়নি। এটা এক ধরনের প্রতারণা করেছে। রাতে নাবিকরা নিজ নিজ কেবিনে ঘুমাতে গেলে সেখানে দুই-১ ঘণ্টা পর পর দস্যুরা দরজা ধাক্কাতে থাকে। এভাবে বিরক্ত করছে দস্যুরা। এদিকে, জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিককে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনরা। তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল। স্বজনদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, যে দস্যু গ্রুপ এমভি আবদুল্লাহকে প্রথমে জিম্মি করেছে তারা পরে দ্বিতীয় দস্যু গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এদিকে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে ওই জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা। সম্প্রতি জাহাজটির চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খান জাহাজটির মালিক পক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেন, সমস্যা হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে।

প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও (ঝুঁকিপূর্ণ)। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মো. মিজানুল ইসলাম জানান, জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা সুস্থ আছেন। এখন পর্যন্ত দস্যুরা জাহাজ মালিকের কাছে কোনো দাবি-দাওয়া জানায়নি। আমরা তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক-ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা চাইছে জাহাজ মালিক ও বিমাকারী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান। তবে জাহাজের নাবিক-ক্রুদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে এমন কোনো অভিযানে সমর্থন নেই বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ।

জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কবির গ্রুপের মুখপাত্র ও মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, এ ধরনের সহিংস অভিযানে আমাদের সমর্থন নেই। জাহাজের প্রতিটি নাবিক-ক্রুর জীবন আমাদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রত্যেককে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন, জাহাজে সহিংস অভিযানে সরকারেরও সমর্থন নেই। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে। এর আগেও আমাদের একটি জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়েছিল। প্রায় ১০০ দিন পর সব নাবিক-ক্রুদের আমরা সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, এবারও অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সব নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব।

প্রসঙ্গত, জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর থেকে জাহাজটি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত