ভোটের পর উধাও আ.লীগের ‘মৌসুমি এমপি’ প্রার্থীরা

ক্ষোভ-হতাশা অনুসারীদের মধ্যে

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

চলতি বছরের শুরুতেই মিটেছে দ্বাদশের ভোট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটাই প্রথম রমজান। আর রোজা শেষে ১১ বা ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজান মাস ঘরে আসলেও এবার জনসাধারণের দুয়ারে দেখা মিলছে না ‘মৌসুমি এমপি’ প্রার্থীদের।

গত রমজানে বেশ সবর ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এমপি প্রার্থীরা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করা, ইফতার সামগ্রী বিতরণসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন তারা। দিয়েছিলেন সুখে-দুখে জনসাধারণের পাশে থাকার বার্তা। কিন্তু ভোট পেরুতেই তৃণমূলে এসব নেতাদের ছায়াও দেখা যাচ্ছে না। ফিকে হয়ে গেছে তাদের সেসব ওয়াদা। অনেকে আবার নিজ নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না। দেখা দিচ্ছেন না তাদের। তবে দুয়েকজন এর ব্যতিক্রমও রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ারা অতিথি পাখির মত উধাও হয়ে গেছেন। আবার যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে করে হেরেছেন তারাও চুপশে গেছেন। ভোটের আগে নির্বাচনি এলাকায় তাদের ঘনঘন দেখা গেলেও, ভোট মিটতেই হাওয়া। দেখা মিলছে না তাদেরও। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের কর্মসূচিও নেই তাদের পক্ষ থেকে। গতবছর রমজানে মানবিক সহায়তা এবং সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে জনসাধারণের পাশে থাকলেও এবার কোনো টু-শব্দও নেই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩ হাজার ৩৬২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে এলাকাবিমুখ হয়েছেন এমপি প্রার্থীরা। নির্বাচনের পর নিজ-নিজ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। মনোয়নপ্রত্যাশী এমপি প্রার্থীদের এমন আচরণে ক্ষুব্দ ও চরম হতাশ তাদের অনুসারীরা। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক তৃণমূল নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ভোট শেষ হয়ে গেছে, এখন আর আমাদের প্রয়োজন নেই। তাই নির্বাচন পর খোঁজখবর নিচ্ছে না এমপি প্রার্থীরা। ভোট এলে তারা আবার আসবে; অতিথি পাখির মতো। তখন আবার আমাদের প্রয়োজন পড়বে। আমরা তাদের জন্য জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। অনেকে হামলা-মামলারও শিকার হয়েছি। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘনিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ব্যস্ততার কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রোজার শুরুতে নেতাকর্মীদের খোঁজখরব নিতে না পারলেও; ঈদের আগেই তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেবেন।

জানা গেছে, দ্বাদশের নির্বাচনে এমপি প্রার্থীদের অনেকেই এবার ওমরাহ হজ করতে সৌদি আবর গেছেন। কেউ আবার ব্যবসা-ব্যাণিজ্য নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন; কেউ ঈদের আগে বাড়ি যাবেন। অনেকে আবার ঈদ করবেন দেশের বাহিরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একজন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এলাকায় গেলে বর্তমান এমপি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। পরে আবার নেতাকর্মী, সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানী করবে। এ কারণে এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। তবে এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ঈদের আগেই আমি এলাকায় যাব, নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেব। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগের বছরই মফস্বল এলাকায় রমজান ও ঈদ কেন্দ্রীক রাজনীতি জমে উঠে। তখন সকল দলের এমপি প্রত্যাশীরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় সমাজিক ও মানবিক কর্মসূচি পালন করেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে জনসংযোগ করা। জনসাধারণকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা। যাতে ব্যালট বাক্সে জনসাধারণ তাদের পক্ষে রায় দেয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, মনোনয়ন না পাওয়া এমপি প্রার্থীরা তৃণমূলে ভিড় জমাচ্ছেন না এটা স্বাভাবিক বিষয়। গতবার নির্বাচনের আগে ঈদ থাকায় সবাই তৃণমূলে বেশি সময় দিয়েছেন, পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। এবার তার কর্মকাণ্ড কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আরো দুই বছর গেলে নির্বাচনের ইস্যু জমে উঠলে তৃণমূলে এমপি প্রার্থীদের যাতায়াত বাড়বে। তখন আবারো তৃণমূলের রাজনীতি বা ঈদ রাজনীতি জমে উঠবে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে আরেক দফায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। নতুন সরকারের এটাই প্রথম ঈদ। তাই এ সময় মানুষের কাছে যেতে হবে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত রুখতে হবে।