ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুচিন্তায় নির্বাচন কমিশন

ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুচিন্তায় নির্বাচন কমিশন

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারর নতুন প্রকল্প না দেওয়ায় পুরানো ইভিএম নষ্ট হলেও সেগুলো মেরামত করতে পারছে না ইসি। আবার টাকা না থাকায় নতুন করে ইভিএম কিনতেও পারছে না। এখন পুরোনো প্রকল্পের বেশিরভাগ ইভিএম নষ্ট হওয়ার পথে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ইভিএম বিষয়টা হলো আমাদের প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। জনবল রাখা হয়নি। এজন্য নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়েই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকি। আমাদের আর্থিক, জনবলের সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্য অনেকগুলো ইভিএমই কাজ করছে না। অচল হয়ে যাচ্ছে। ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেগুলো সচল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোই ব্যবহারের জন্য পাঠানো হচ্ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখা দুই হাজারের অধিক ইভিএম সরাতে বলছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। তবে গোডাউন ভাড়া না পাওয়া ও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইভিএম স্থানান্তর করতে পারছে না ইসি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো এখন ইসির গলার কাঁটার মতো আটকে আছে। ইভিএম অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে ইসির কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। তবুও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী সম্প্রতি ইসিকে জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত ইভিএমগুলোর গোডাউন ভাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে একাধিকবার সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সংরক্ষিত ইভিএমগুলো চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আবারও অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি জানান, নির্বাচনি কাজে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ইভিএমগুলোর কিউসি করা হয়। কিউসি করার সময় অপারেটর ও শ্রমিকদের জন্য অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্প বা রাজস্ব খাত থেকে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা জরুরি। ইভিএমের জন্য গোডাইন ভাড়া করেও রাখা যাচ্ছে না। কারণ, গোডাউন ভাড়ার কোনো বরাদ্দ নেই। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে যে ইভিএমগুলো রাখা আছে, সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে সরাতে হবে। কারণ, ইনডোর স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষ বারবার ইভিএমগুলো সরানোর জন্য বলছে। আমাদের ইভিএমের কারণে তাদের বিভিন্ন খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। সে কারণে আমরা কমিশনকে বারবার ইভিএমগুলো এখান থেকে সরাতে অনুরোধ করছি।

স্টেডিয়ামে কতগুলো ইভিএম আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে ২ হাজার ৭৭৩টি ইভিএম ছিল। এর মধ্যে ৫৫৫টি ইভিএম কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ২১৮৮টি ইভিএম এখনও চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে সংরক্ষিত আছে। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি জেলা প্রশাসককেও বলেছেন। জেলা প্রশাসক আবার সচিবকে জানিয়েছেন, আমরাও সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া ইভিএমগুলো রাখতে গোডাউন ভাড়া পাইনি।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ইভিএম স্থানান্তরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিকল্প জায়গা বের করে ইভিএমগুলো সরানোর ব্যবস্থা করছি। বর্তমানে চট্টগ্রামের ইনডোর স্টেডিয়ামে ইভিএমগুলো রাখা হয়েছে। স্টেডিয়াম থেকে ইভিএমগুলো পাশের অঞ্চলে সরানোর জন্য একটা পরিকল্পনা করেছি।

তিনি আরও বলেন, ইভিএমের জন্য গোডাইন ভাড়া করেও রাখা যাচ্ছে না। কারণ, গোডাউন ভাড়ার কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বৃহস্পতিবারের কমিশন সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই ইভিএম নতুন জায়গায় সংরক্ষণ করা হবে।

এ বিষয়ে সভায় ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, ইভিএম শ্রমিকদের মজুরি খাতে প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ আছে। এই খাতে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলো থেকে চাহিদা পাওয়া গেলে অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি ইভিএম মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলে উন্নত মানের ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত রেখে যায়।

২০১৬ সালে পরবর্তী কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম তৈরি করে নেয়।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেওয়া হয়। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

প্রকল্প থেকে দেড় লাখের মতো ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। তবে সেই উন্নত মানে ইভিএম পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২০২৩ সালে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে পড়ে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজারের মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য নেই নতুন কোনো প্রকল্পের অর্থের জোগান। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। সেই শঙ্কাই এখন সত্য হতে চলেছে। কেননা, অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে নষ্ট ইভিএমগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে ইসি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে কার্যবিবরণী বলছে, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম কোয়ালিটি চেক (কিউসি) করে অকেজো ইভিএম সংখ্যা নির্ধারণের জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দিয়েছেন। বর্তমানে সেই কাজ চলছে। কিউসি শেষ হলেই বাস্তবায়ন করা হবে সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত