ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভুটানের রাজার চার দিনের সফর শুরু

নতুন উচ্চতায় ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক

* শেখ হাসিনা-ওয়াংচুক বৈঠক * তিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর * বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামে যাবেন ভুটানের রাজা
নতুন উচ্চতায় ঢাকা-থিম্পু সম্পর্ক

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সস্ত্রীক ঢাকায় এসেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন ভুটানের রাজা। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজার মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই ও একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়। সমঝোতাগুলো- ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। এছাড়া, নবায়ন হয়েছে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি।

ভুটানের রাজাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভুটানের রাজা।

আজকে স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন জিগমে খেসার। এরপর শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন তিনি। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। আগামীকাল পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এরপর বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করতে বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা। কুড়িগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। সেখানে গার্ড অব অনার দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিদায় জানাবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ভুটানের রানী, তার পরিবারের সদস্যরা, ভুটানের সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি বিভিন? দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ভুটানের রাজার সফরসঙ্গী রয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ আরও সুগম করতে ভুটানের বিনিয়োগে কুড়িগ্রাম সদরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও রৌমারী স্থলবন্দর এবং চিলমারী নৌ-বন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা আছে; সহজেই যাতায়াত করা যায়। তাই এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় ভুটানের রাষ্ট্রদূত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। সেদিক থেকে কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ভুটানের আগ্রহ ব্যাপক। এতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে কুড়িগ্রামে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বড় অ্যাভিনিউ আসবে। একটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হবে, আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে কাজ করবে। জেলার সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। সামগ্রিকভাবে জাগরণ তৈরি হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ভুটানের রাজার সফরকালে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ভারতকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০-এ উন?ীত করা হবে। ভুটানে ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে দেশটির কর্মকর্তাদের তিন বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন?য়নে ল্যাপটপ, ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার দেবে বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে ভুটানের সেবা খাত ও বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সরাসরি উপকৃত হবে। যা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক অন্যন্য উচ্চাতায় পৌঁছাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত