জাকাত মন ও সম্পদকে পবিত্র করে

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম প্রধান ইবাদত জাকাত। ধনীর সম্পদের ২.৫ শতাংশ স্বেচ্ছায় আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত আটটি খাতে দান করার নাম জাকাত।

আমাদের দেশে রবিশষ্যের মৌসুস শীতকাল। অন্য সময়ে শাকসব্জি ফলমূল চাষ করলে ফসল ফলে না বা ফলন ভালো হয় না। গ্রীষ্মের মৌসুম ছাড়া আমের ফলন আশা করা যায় না। অনুরূপ ইবাদতের ভালো ফলন বা সওয়াব পাওয়ার মাস রমজান। খুব সহজে হিসাব করলে, অন্য সময়ে ফরজ ইবাদত করলে যে সওয়াব মিলে রমজান মাসে নফল ইবাদত করলে সে সওয়াব পাওয়া যায়। আর রমজানের ফরজ ইবাদতের সওয়াব হয় কমপক্ষে সত্তর গুণ। এই বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশায় শুরু থেকে রমজান মাসেই আর্থিক ইবাদত জাকাত আদায় করার রেওয়াজ চলে আসছে ইসলামের ইতিহাসে।

দৃশ্যত মনে করা হয় জাকাত ধনীদের পক্ষ হতে অভাবী মানুষের প্রতি দান ও অনুকম্পা। কিন্তু কুরআন মজীদের ভাষ্য হচ্ছে, জাকাত মূলত গরিবদের হক বা প্রাপ্য, যা ধনীদের হিসেবে এসে জমা হয়েছে। সেটিই মালিকের কাছে ফেরত দিতে হয় জাকাত দানের মাধ্যমে।

মানুষে মানুষে লেনদেনের মাধ্যমে সংসার জীবন। এখানে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের বেলায় একে অপরের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেকে। এই লেনদেনে দেখা যায় কিছু লোকের কাছে অতিরিক্ত সম্পদ জমা হয়েছে আর কিছুলোক জীবন চালানোর ন্যূনতম সম্পদ থেকে বঞ্চিত। তার মানে সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির সম্পদ ধনী শ্রেণির কাছে গিয়ে জমা হয়েছে। তবে বিদ্যমান ব্যবস্থায় কে কতটুকুন বঞ্চিত বা অতিরিক্ত লাভবান হয়েছে কেউ জানে না। এমতাবস্থায় শরিয়ত বলে দিয়েছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যদি কারো কাছে এক বছরের বেশিকাল স্থায়ী হয় তাহলে শতকরা ২.৫ ভাগ সমাজের অভাবী শ্রেণির কাছে ফিরিয়ে দিলে সে দায়মুক্ত হতে পারবে।

মানুষ মনে করে সম্পদ সে চেষ্টা ও কষ্টের মাধ্যমে অর্জন করে। কথাটি আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ, সম্পদের মূল মালিক আল্লাহ। স্কুল জীবনে দুই বন্ধু একসঙ্গে লেখাপড়া করেছে; বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে, স্কুলে যাকে কম চালাক মনে করা হত সে বিরাট সম্পদের মালিক আর যে খুব চালাক চতুর ছিল সে অর্থবিত্তে অনেক পেছনে। তার আসল কারণ, সম্পদের মূল নিয়ন্তা আল্লাহ তাআলা। তিনিই যাকে ইচ্ছা দান করেন, যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। কাজেই আল্লাহর দেয়া সম্পদ তার নির্দেশে ব্যয় করাই বিজ্ঞতার পরিচায়ক।

আমাদের বাড়িঘরের ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হয়। বছরে দু একবার সার্ভিসিং না করলে কলকারখানার যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে। সম্পদের মধ্যেও অনেক ময়লা আবর্জনা জমা হয়। তা পরিষ্কার করার বা সম্পদযন্ত্রের বাৎসরিক সার্ভিসিং করার প্রক্রিয়া হচ্ছে জাকাত দান। সাধারণত ধনীদের প্রতি সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির ঈর্ষা থাকে। এই ঈর্ষা থেকে ধনীগরীবে শ্রেণি বৈষম্য ও হানাহানির সূত্রপাত হয়। সমাজতন্ত্রের উত্থানের মূল জায়গা ওখানেই। ধনীরা যদি নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহ নির্ধারিত অংশ গরিবের মধ্যে বা সমাজের কাছে ফিরিয়ে দেয় তাহলে ধনীদের প্রতি ঈর্ষার পরিবর্তে সাম্য ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এভাবে জাকাত ও সদকা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামী সমাজের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।