ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাধীনতা দিবসে স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল
স্বাধীনতা দিবসে স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়

নানা আয়োজনে গতকাল দেশে উদযাপিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে গোটা জাতি। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে স্বাধীনতার চেতনায় উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়েছেন সবাই। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারা দেশ সেজেছিল বর্ণিল সাজে।

গতকাল ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। এ সময় করুণ সুর বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলের পক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলে যাওয়ার পর সর্বসাধারণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাসদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অগণতান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনো আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা সুসংহতকরণের বিরুদ্ধে অন্তরায় সৃষ্টি করে আছে। এই দিনে আমাদের শপথ হবে বিএনপির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি বিজয়কে সংহতকরণে বাধা বা অন্তরায় হয়ে আছে, এই অশুভ শক্তিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা প্রতিহত করব, পরাভূত করব, পরাজিত করব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে এগিয়ে যাব।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি ৩২ নন্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তিনি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা : আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ও তার আশপাশের সড়কগুলোতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগসহ বিভিন্ন দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কাজী মামুনুর রহমান (মাহিম) ও সাধারণ সম্পাদক সানজিদা জাহানের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত : স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ১০ টাকার স্মারক ডাক টিকিটের পাশাপাশি ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকার ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। এ উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়। আজ থেকে ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে স্ট্যাম্প, ফাস্ট ডে কভারর্স এবং ডাটা কার্ড বিক্রি শুরু হবে। পরবর্তীতে সারাদেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসেও এসব পাওয়া যাবে।

দোয়া ও প্রার্থনা : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এরই অংশ হিসাবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, রাত ১২টা ১ মিনিট (২৫ মার্চ দিবাগত) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়।

টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি কর্মসূচি দেওয়ার পর বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াচ্ছিল তখন জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ক্রীড়ানক খুনি মোশতাক-জিয়া চক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তাই বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি।

তিনি বলেন, মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও লেখাপড়ার নিশ্চয়তায় ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আজকের বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত- সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত