ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশেষ সাক্ষাৎকার

মৎস্য খাতে স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে

দেশের বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান গড়তে মৎস্য খাতে স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরি করতে চান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান। সম্প্রতি আলোকিত বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলোকিত বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক রাহাত হুসাইন।
মৎস্য খাতে স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে

প্রশ্ন: ছাত্ররাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এবার সরকারের মন্ত্রীও হলেন, আপনার অনুভূতি কি?

আবদুর রহমান : এমপি-মন্ত্রী হওয়া একজন রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে বড় স্বীকৃতি। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, সুযোগ পেয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করাটাই সবচে বড় মহৎ কর্ম। সেই কর্মটা সুন্দরভাবে, সফলভাবে করতে পারলেই সব প্রাপ্তির সার্থকতা। দলের জায়গা থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা বড় সুযোগ আছে। আবার দল সরকারে আছে; সেখানেও মানুষকে সেবা দেওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল ও সরকারে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারলে ইতিবাচক একটা সন্তুষ্টি থাকে।

প্রশ্ন: নতুন দায়িত্ব কতটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন?

আবদুর রহমান : সব কাজেই চ্যালেঞ্জ থাকে। চ্যালেঞ্জটাকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ করাটাই সফলতা। এজন্য সততা-নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার দরকার হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি চেষ্টা করব; সঠিকভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে তা পালন করতে।

প্রশ্ন: মৎস্য খাতকে স্মার্ট করতে আপনার পরিকল্পনা কি?

আবদুর রহমান : মৎস্য খাত স্মার্ট করার মূল পরিকল্পনা হচ্ছে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। উৎপাদন বৃদ্ধি করার যথেষ্ট পরিমাণ উপাদান আমাদের রয়েছে। আমাদের দেশের খাল-বিল, বদ্ধ জলাশয়, পচা-মজা পুকুরগুলোকে মাছ চাষের উপযোগী হিসেবে তৈরি করা। এগুলোকে সংস্কার করে মাছ চাষ করতে পারলে; আমরা সেখান থেকে একটি ভালো ফলাফল পাব। আমাদের এমন একটি পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রশ্ন: দেশের প্রান্তিক মৎস্য চাষিরা ক্ষুদ্র ঋণ পেতে ভোগান্তির শিকার হয়, ভোগান্তি রোধে কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা?

আবদুর রহমান : এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। আমাদের যার যা দায়িত্ব, আমরা সেটা সঠিকভাবে পালন করি না। অবহেলা করি। এটা একটা সাংঘাতিক খারাপ দিক। আমরা চিন্তা করছি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বসব। ক্ষুদ্র ঋণের প্রকল্প নিয়ে কথাবার্তা বলব। যাতে প্রান্তিক মৎস্য চাষিরা সহজ উপায়ে ঋণ পায়। একজন মৎস্য চাষি, নিজস্ব পচা মজা পুকুরে কিংবা বাড়ির পাশের জলাশয়ে মাছ চাষ করতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা নেব।

পরিকল্পিত উপায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মৎস্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করাটাই হবে গণমুখী কর্মসূচি। ক্ষুদ্র মৎস্য চাষিদের ঋণের চাহিদা খুব বেশি পরিমাণে নয়। ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সহায়তা করে তাহলে দুইটা দিক হবে, প্রথমত মাছের উৎপাদন বাড়বে; আর আরেকটা দিক হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মৎস্য খাত দেশের বেকার যুবকদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করবে। তখন চাকরির পেছনে ছুটবে না। মৎস্য খাতে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। তারাই তখন চাকরি দেবে।

প্রশ্ন: মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা বাড়াতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না?

আবদুর রহমান: মৎস্য খাতে রপ্তানির সিংহভাগ জোগান দেয় চিংড়ি আর ইলিশ। আশার বিষয় হচ্ছে, গলদা-বাগদা চিংড়ির বাহিরে নতুন জাতের একটি চিংড়ি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ। নাম ভেনামি চিড়িং। ভেনামি উচ্চফলনশীল চিংড়ি। এর উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণ চিংড়ি থেকে ৪০ গুণ বেশি। সেটিকে পরিচিত করার জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ভেনামি চিংড়ি চাষ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এই চিংড়ি এবং ইলিশ রপ্তানি করে সন্তোষজনক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তখন মৎস্য খাত আমাদের জিডিপিতে অনেক বড় ধরনের ভূমি রাখতে পারবে। আর ইলিশ হচ্ছে আমাদের একটি প্রাকৃতিক সম্পদ।

ইলিশকে তো আর চাষ করার সুযোগ নেই। মা ইলিশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে, ইলিশ উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি জাটকা ধরা বন্ধ করতে হবে। তাহলে দেশে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য মৎস্যজীবী, জেলে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রশ্ন: যারা জাটকা ধরে তাদের জন্য কি বার্তা দেবেন?

আবদুর রহমান : দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। অথচ অবৈধভাবে জাটকা আহরণের নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করে থাকে। তারা যতই প্রভাবশালী হোক; জাটকা ধরলে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা দেশের মৎস্য সম্পদের শত্রু তাদের ব্যাপারে কোনো তদবীরও শোনা হবে না। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করতে হবে। জাটকা সংরক্ষণের বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর (গরু), ছাগল, ভ্যান বিতরণসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া গৃহহীন জেলেদের আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও ঘর দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি তুলে ধরব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত