ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজা ওয়াংচুককে স্বাগত জানাতে অধীর অপেক্ষায় কুড়িগ্রামবাসী

ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা

ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা

উত্তরের জনপদ পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রাম জেলায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে যাচ্ছে ভুটান। এ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগিয়েল ওয়াংচুক আসছেন কুড়িগ্রামে এলাকা পরিদর্শনে। রাজাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কুড়িগ্রামের মানুষ। নানা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন জেলাবাসী। কেন না, ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ধরলা নদীর পাশে মাধবরাম গ্রামে গড়ে উঠতে যাচ্ছে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে জিটুজি ভিত্তিতে গড়ে তোলা হবে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। তাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থানটি স্বচক্ষে পরিদর্শনে কুড়িগ্রাম আসছেন স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশ ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানের সফর কেন্দ্র করে উৎসব আনন্দে উদ্বেলিত কুড়িগ্রাম।

জানা যায়, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফর তার চার দিনের সফরসূচির মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। যে স্থানে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে, সেই স্থানটি দেখতে চেয়েছেন দেশটির রাজা। সে আলোকেই রাজার কুড়িগ্রাম সফরের সকল আয়োজন প্রশাসনিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অবশ্য আজই কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে অবস্থিত সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে স্থলপথে ভুটানে ফিরবেন তিনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানিয়েছে, ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে সরকারি খাস জমির ওপর ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। প্রয়োজনে ওই স্থানে আরো জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন ও বেজা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে স্থানে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে, তাতে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে। এখানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাণিজ্যিক হাব হওয়ার মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। এতে কুড়িগ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এর মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল ঘিরে তৈরি হবে অর্থনৈতিক নতুন সম্ভাবনা।

তারা বলেছেন, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক বিকাশে মাইলফলক সৃষ্টি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কুড়িগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জোন হিসেবে পরিচিতি পাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আগামী এক দশকের মধ্যে কুড়িগ্রাম এই অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ জেলা হবে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষ ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। গোটা কুড়িগ্রাম উৎসাহ আর আনন্দ বিরাজ করছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরে কুড়িগ্রামের গা থেকে দেশের সবচেয়ে গরিব জেলার অপবাদ ঘুচে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ‘এখানকার মানুষ আর রিলিফ চায় না, কাজের সুযোগ চায়। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হলে জেলার দারিদ্র্যের হার কমে যাবে। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হবে, আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে কাজ করবে। বদলে যাবে জেলার সার্বিক চিত্র।

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হতে যাচ্ছে বলে জানিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম জাকির হোসেন বলেন, ‘এটি বড় সুসংবাদ যে কুড়িগ্রাম বাণিজ্যিক হাব হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক যেসব ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপে যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে।’

ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামের বেকারত্ব নিরসন হবে। বাইরে থেকে যদি বিনিয়োগ করা হয়, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আসেন তাহলে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেইসঙ্গে জেলায় বহুমুখী উন্নয়ন হবে। কুড়িগ্রাম এক অনন্য জেলায় পরিণত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত