ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগামী মাসে ঢাবিতে যাত্রা শুরু হচ্ছে পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্লাবের

প্রশংসনীয় এ অনন্য উদ্যোগে বাড়বে সচেতনতা
আগামী মাসে ঢাবিতে যাত্রা শুরু হচ্ছে পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্লাবের

দুর্যোগকালীন করণীয় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক সময় বিচলিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। এতে করে প্রতি বছর ক্ষয়ক্ষতি হয় দেশের বিপুল সম্পদ। শুধু সাধারণ মানুষই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেরই এই বিষয়ে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ঘটে নানা দুর্ঘটনা। গত বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হাতে নেয় এক নতুন উদ্যোগ।

দুর্যোগের সময় শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্লাব’ নামে প্রতিটি হলে একটি করে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইতিমধ্যে নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যদিয়ে বাস্তবায়ন হবে এই উদ্যোগের। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুরুতে প্রতিটি হলে চালু হলেও পরে সেটি প্রসারিত করে প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটেও প্রতিষ্ঠিত হবে এই ক্লাব।

ক্লাবের গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা যেন অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগে আতঙ্কগ্রস্ত না হয় এবং দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা শিক্ষাজীবন থেকেই রাখতে পারে; সেজন্য এই ক্লাবের মাধ্যম তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে দুর্যোগে ও এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবন থেকে নিজেদের দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য গড়ে তুলতে পারবে।

হলের প্রতিটি ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিশ্চিত করবে এই ক্লাব। পাশাপাশি এই ক্লাবের মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করবে শিক্ষার্থীরা। আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেলগুলোতে এই ক্লাবের কার্যক্রম শুরু হবে। ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি এবং হলের তিনজন আবাসিক শিক্ষক ও হল প্রাধ্যক্ষের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকবেন প্রতিটি হলের প্রাধ্যক্ষ।

এই ক্লাবের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা; যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় হলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করা; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেমিনার আয়োজন করা; পরিবেশ সচেতনতায় জাতীয় দিবসসমূহ পালন করা; নিয়মিত ‘ক্লিন ক্যাম্পাস’ কার্যক্রম পরিচালনা; ডাস্টবিন ব্যবহারে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছর প্রতিটি হল থেকে একজন শিক্ষার্থীকে প্রশংসাপত্র প্রদান করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ থাকবে এক বছর। প্রতি দুই মাস অন্তর একটি করে সভা করতে হবে। সভায় ক্লাবের নীতিমালায় উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এই কমিটিতে একজন সভাপতি, দুইজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, দুইজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন দপ্তর সম্পাদক, একজন অর্থ সম্পাদক, একজন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ছয়জন নির্বাহী সদস্য থাকবেন; যাদের সবাই হবেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এদিকে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন হলের দায়িত্বরত প্রাধ্যক্ষরা। তাদের মতে, পরিবেশ নিয়ে ক্যাম্পাসে অনেকেই কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি মনে করি উপাচার্যের এই উদ্যোগটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। এর মধ্যদিয়ে দুর্যোগপ্রবণ এই সমাজে শিক্ষার্থীদের যেমন পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ তাদেরকে এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল করার ক্ষেত্রেও এই ক্লাব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এর ফলে আজকের শিক্ষার্থীগণ ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও পরিবেশের উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। উপাচার্যের অসাধারণ এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা বিদ্যমান। ক্যাম্পাসে অতিমাত্রায় বায়ু দূষণ ও পলিথিন ও আবর্জনার ব্যবহার দেখা যায় যত্রতত্র। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও এক্টিভিজমের জায়গায় বড় ধরনের একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করতে প্রত্যেক হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্লাব অন্যতম একটি প্ল্যাটফর্ম হবে আশা করি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এই ক্লাবের লক্ষ্য হবে স্ব স্ব বিভাগ, ইনস্টিটিউট কিংবা হলের ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। বিগত ভূমিকম্পে দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থী হলের দুই-তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছে, পা ভেঙেছে; এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাদেরকে সচেতন করা। শিক্ষার্থীরা যেন অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পসহ যে কোনো দুর্যোগে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়। তারা যেন দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা শিক্ষাজীবন থেকেই রাখতে পারে। সেজন্য এই ক্লাবের মাধ্যম তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে দুর্যোগে ও এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে।

‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবন থেকে নিজেদের দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য গড়ে তুলতে পারবে। হলের প্রতিটি ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিশ্চিত করবে এই ক্লাব। পাশাপাশি এই ক্লাবের মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করবে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছর নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। সামনের দিনে হলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটেও এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হবে’ যোগ করেন উপাচার্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত