জিম্মি জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’

মুক্তিপণের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়

আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনা হচ্ছে

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও জাহাজের বিষয়ে জলদস্যুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত আছে। কিন্তু মুক্তিপণের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত পৌঁছায়নি কোনো পক্ষই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ‘জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সঙ্গে দর কষাকষি করে মুক্তিপণ চূড়ান্ত হয়েছে’- এমন খবর প্রচার হচ্ছে। তবে এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই। যেহেতু মালিকপক্ষের হয়ে আমি গণমাধ্যমে কথা বলছি, তাই দৃঢ?ভাবে বলতে পারি আমাকে এমন কিছু জানায়নি।

তিনি বলেন, জলদস্যুরা যে তৃতীয়পক্ষ নিয়োগ করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে এখনো তারা মুক্তিপণের বিষয়টি সামনে আনেনি। তবে আমরা এমন কিছু হতে পারে ধরে নিয়ে অগ্রিম কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছি। মিজানুল জানান, ১৩ বছর আগে এমভি জাহান মনিকে যেভাবে দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই তারা এগোচ্ছেন। নাবিকরা মুক্তি পেলে তাদের বিমানযোগে দেশে আনা হবে। এছাড়া জাহাজ ফিরিয়ে আনার জন্য অপর একটি দলকে পাঠানো হবে, সেটিও ঠিক করে রাখা হয়েছে।

আমরা আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছি। অনেকের মতো আমরাও আশা করছি, ঈদের আগে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যাবে। তবে এটা সম্পূর্ণ জলদস্যুদের হাতে, ওরা না চাইলে আমরা নিজের থেকে কিছু করতে পারবো না। ঠিক কার সঙ্গে কোথায়, আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে এ মুহূর্তে বলা ঠিক হবে না। তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। জাহাজে থাকা খাবারের বিষয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা এখন জাহাজের খাবার তেমন একটা ব্যবহার করছেন না। তারা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছে।

বিমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) এবং ক্রাইসিস টোয়েন্টিফোর জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিক ও জাহাজ মুক্ত করার জন্য সোমালিয়ার জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে।

জিম্মি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিককে উদ্ধার করতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে নয় মালিকপক্ষ। এ বিষয়ে জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট মহলে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে নাবিকদের উদ্ধারে জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ।

জাহাজে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান। তিনি জানিয়েছেন, নাবিকদের খাবার আর পানির রেশনিং এখনো চলছে। খাবার বলতে ইফতারে চনাবুট, পেঁয়াজু, দুই রকম ফল আর সাহরিতে ভাত দিয়ে ন্যূনতম মাছ-মাংস ও তরকারি খাচ্ছেন। সপ্তাহে মাত্র একবার স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারে অনুমতি দিচ্ছে জলদস্যুরা।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, জলদস্যুরা তীর থেকে নিজেদের জন্য তেহারি ধরনের খাবার আনছেন। অনেক সময় নাবিকদেরও অফার করা হচ্ছে, আবার নাবিকদের খাবার থেকেও তারা খাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সে সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৫৭০ ন্যাটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। দস্যুদের কাছে জিম্মি হয় ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।

জিম্মি জাহাজটি এখন সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড প্রদেশের নুগাল অঞ্চলের জিফল উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে। অদূরেই মোতায়েন করা আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের (ইইউএনএভিএফওআর) আটলান্টা অপারেশনের একটি যুদ্ধজাহাজ। তবে যে কোনো ধরনের অভিযান থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা সে পথে এগোয়নি। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি।