ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উখিয়ায় ডাম্পার চাপা দিয়ে বন কর্মকর্তাকে হত্যা

উখিয়ায় ডাম্পার চাপা দিয়ে বন কর্মকর্তাকে হত্যা

বন ও পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় বন বিভাগের এক বিট কর্মকর্তাকে মাটি ভর্তি ডাম্পার চাপা দিয়ে হত্যা করেছে পাহাড় খেকোরা।

এদিকে বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানকে হত্যায় ব্যবহৃত ডাম্পারটি উখিয়া থানার পুলিশ নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে আটক করেছে। তবে গাড়ির ঘাতক চালক ও মালিককে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উথিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের পুত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতে অভিযানের পথিমধ্যে রাজাপালং ইউনিয়েেনর হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদকে পরিকল্পিতভাবে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ সময় মস্তিষ্ক ও দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাজ্জাদ, পরে তার সাথে থাকা উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার গাড়িচালক মো. আলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ঘাতক ডাম্পারটি বন বিভাগের তালিকাভুক্ত পাহাড়খেকো ছৈয়দ করিম ওরফে কানা ছৈয়দ করিমের। তিনি রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের সুলতান মিয়ার পুত্র। রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা গ্রামের আবুল হাসেমের পুত্র বাপ্পি ওই ডাম্পার চালাচ্ছিল।

উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন জানান, নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে ঘাতক ডাম্পারটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে আটক করা হয়েছে।

দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানান, পাহাড়খেকোদের সামাজিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তথা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে, আমরা একজন দক্ষ বন কর্মকর্তাকে হারালাম। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাজ্জাদুজ্জামান এক কন্যাসন্তানের জনক।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিজলিয়া সড়ক দিয়ে ঢুকে ৪০টি অবৈধ ডাম্পার দিনে রাতে পাহাড়ের মাটি ও বালু পাচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। যে যেখানে পারছে বালু মজুত করছে। হিজলিয়া থেকে শুরু করে হরিণমারা হয়ে খয়রাতিপাড়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে মজুত করা রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বালু। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বালুর মজুত নেই।

পাহাড়কাটা ও বালু পাচার কাজে নিয়োজিত অবৈধ ডাম্পার মালিকদের মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা ও বাগানের পাহাড় এলাকার মোহাম্মদ কোম্পানি, গফুর কোম্পানি, মাহমুদুল হক, ছৈয়দ করিম, মাস্টার কবির আহমেদ, বদু প্রকাশ ফিটিং বদু, শাহ আলম, কানা সৈয়দ করিম, খালখাছা পাড়ার মো. মুস্তাফিজ, মুফিজ, জাদিমোরা এলাকার সাইফুল কবির, আলিমোরার জামাল, হিজলিয়া মাজর পাড়া এলাকার মৌলভী রেজা। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে হিজলিয়ার আব্দুল্লাহ, হেলাল, রশিদ, উত্তর পুকুরিয়ার বেলাল, তুতুরবিলের সালাহ উদ্দিন, কুতুপালং এলাকার মংচানু বড়ুয়া, কুতুপালং পিএফপাড়া এলাকার সাগর বড়ুয়া প্রমুখ। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, আমরা অবৈধ ডাম্পারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। গত কয়েকদিন আগেও মাটি ভর্তি একটি ডাম্পার আটক করে মামলা দিয়েছি। বিট কর্মকর্তাসহ আমরা বন কর্মীরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সরকারের বনসম্পদ রক্ষার্থে। দোছড়ি বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদ সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিজের প্রাণটা পর্যন্ত দিয়ে দিল। অবৈধ ডাম্পার, বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা, অবৈধ স’মিলসহ সবকিছুর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অভিযান শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।

কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উখিয়া পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটগুলো বেপরোয়া ও ভংয়কর। তারা মূর্তিমান আংতকের নাম হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে। এরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধাশীল। এই সিন্ডিকেটকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এই চক্রের কারণে উখিয়া পুরোপুরি ধ্বংসের পথে। পাহাড় ধ্বংসকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জে দায়িত্বরত বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও ইনানী রেঞ্জের দায়িত্বরত বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে রহস্যজনক কারণে। সচেতন মহলের মধ্যে এই নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত