বাড়ছে এমভি আব্দুল্লাহর পরিচালনায় খরচ

ঝুঁকিপূর্ণ রুটে আর্মস গার্ডের নির্দেশনা

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’ জিম্মি হওয়ার ঘটনার পর নৌবাণিজ্য অধিদপ্তর থেকে নতুন নির্দেশনা এসেছে। এতে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে যাত্রা করা বাংলাদেশি জাহাজগুলো নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছে। নির্দেশনায় বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথের সব রুটে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে আর্মস গার্ড নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জিম্মি নাবিকদের মুক্তি করার লক্ষ্য আলোচনা চলমান আছে। বাংলাদেশ নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ রুটে আগে থেকেই আর্মস গার্ড নেওয়ার কথা ছিল। এতদিন কেউ নিত আবার কেউ নিত না। কিন্তু এমভি আবদুল্লাহর ঘটনার পর থেকে সব জাহাজে আর্মস গার্ড নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে জলদস্যু ঝুঁকি এড়াতে ভারত মহাসাগরসহ বেশক’টি সামুদ্রিক রুটে আর্মস গার্ড নেওয়ায় জাহাজ পরিচালন খরচ বাড়বে। এতে রাউন্ড দ্য ট্রিপে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়তি খরচ করতে হবে। নেভাল সেক্টরের প্রতিনিধিদের একটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক রুটে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সিকিউরিটি বাহিনী থেকে আর্মস গার্ড নিতে হয়। আর আন্তর্জাতিক এ সিকিউরিটি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি। লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণের পর থেকে আর্মস গার্ডের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। ভারত মহাসাগরে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে চলাচলের সামুদ্রিক রুট এবং লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খাল দিয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের সামুদ্রিক রুটে এখন আর্মস গার্ড নিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। জাহাজের ভাড়া যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে দিন শেষে তা পণ্যের মাধ্যমে ভোক্তার ওপর গিয়ে বর্তাবে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমাদের আমদানি বাণিজ্যের ৮ শতাংশ এসে থাকে। আর এসব পণ্যের মধ্যে গম, চিনিসহ কিছু ভোগ্যপণ্য এবং ওষুধ ও রাসায়নিক উপাদানসহ কিছু বিলাসদ্রব্য রয়েছে। এখন যদি সব জাহাজে আর্মস গার্ড নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এর খরচ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাবে। এর প্রভাব আমদানি হওয়া প্রতিটি পণ্যের উপর পড়বে। আর্মস গার্ড নিলে কী পরিমাণ বাড়তি খরচ হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ লাগতে পারে। মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব রহমান জানান, কোনো জাহাজে আর্মস গার্ড আছে আর কোনো জাহাজে নেই এ তথ্য দস্যুদের কাছে চলে যাওয়ার বিষয়টিও চিন্তার বিষয়। এমভি আবদুল্লাহর জাহাজে আর্মস গার্ড ছিল না কিন্তু জাহাজটি উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। এ জাহাজের আশপাশে আরও জাহাজ ছিল, সেসব জাহাজে দস্যুরা হামলা চালায়নি। কিন্তু আবদুল্লাহতে হামলা চালিয়েছে, তা অস্বাভাবিকও বটে। তবে জাহাজে নিরাপত্তার খাতিরে যদি আর্মস গার্ড নিতে হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়বে। এদিকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যদি আর্মস গার্ড না নেওয়া হয় তাহলে তো আবার এমভি আবদুল্লাহর মতো জিম্মি করলে জাহাজ, জাহাজের পণ্য ও নাবিকরা জিম্মি হয়ে যেতে পারে। তখন খরচ যেমন বাড়বে, ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। এদিকে গত ২০ মার্চ থেকে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। রমজানের ঈদের আগেই নাবিক ও জাহাজ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মালিকপক্ষ থেকে জানিয়েছিল। বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ। গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, নাবিকদের সবাইকে জাহাজের ব্রিজের ওপর নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার (২৭ মার্চ) থেকে তাদের আবারও কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। ফলে বর্তমানে নাবিকরা কেবিনে রয়েছেন। জাহাজের বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেখানে তারা রেশনিং করে পানি ব্যবহার করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি আরও জানান, জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি অনেক। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। মুক্তি-পরবর্তীতে নাবিকদের তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। প্রসঙ্গত, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুদের কবলে পড়ে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো বাংলাদেশি জাহাজ জলদস্যুদের অপহরণের শিকার হলো। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহানমণি জাহাজটি সোমালিয়ার জলসদস্যুরা ছিনতাই করেছিল। ওই সময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর জাহাজসহ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। আর যাওয়ার পথে সোমালিয়ান উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি সোমালিয়ান দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। পরে দস্যুরা নাবিকদের জিম্মি করে তাদের ঘাঁটি গ্যারাকাদে নিয়ে যায়। এখনো তাদের আস্তানায় রয়েছে জাহাজ ও নাবিকরা।