ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরমে সচিবালয়ে বাড়ছে চাপ

এসি জটিলতা কাটছে না

এসি জটিলতা কাটছে না

কয়েক দিন ধরে গরম পড়তে শুরু করেছে। চলমান গরম থেকে স্বস্তি পেতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। সেজন্য পুরোনো এসি পরিবর্তনসহ প্রাধিকারের ভিত্তিতে এসির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু এসি সরবরাহে সংকট থাকায় বিপাকে পড়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ইডেন বিভাগ।

সরেজমিন কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে, সচিবালয়ে মোট ১০টি ভবন আছে, যার ৮টিই স্বাধীনতার আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও চারটি টিনশেড একতলা ভবনেও সচিবালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব ভবনের প্রায় কক্ষে আলাদা আলাদা এসির ব্যবস্থা রয়েছে। আর অর্থ বিভাগ সেন্টাল এসি দ্বারা আবদ্ধ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনেও সেন্টাল এসির ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও বেশকিছু অফিস কক্ষে দীর্ঘদিনের পুরোনো উইন্ডো এসি চলছে, এসব এসির শব্দে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে কর্মকর্তাদের। আবার কিছু কক্ষে এসি নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এতদিন মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম-সচিবরা তাদের কক্ষে এসি পেলেও নতুন প্রাধিকারের তালিকায় উপসচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কক্ষে এসি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীর দাপ্তরিক কার্যালয়ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এবং তাদের কক্ষে একটি করে বৈদ্যুতিক কেটলি ব্যবহারের প্রাধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে সচিবালয়ে কর্মরত সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, সহকারী সচিব থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের (এও) কক্ষে এসির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রাধিকারের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা নিজেদের কক্ষে এসি বসানোর আবেদন করছেন। বছরের পর বছর এসির চাহিদার আবেদনের সুষ্ঠু সুরাহ হচ্ছে না। এরমধ্যেই আবার প্রায় ৭০০ উইন্ডো এসি পরিবর্তনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এসি সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় কর্মকর্তাদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হচ্ছে গণপূর্তের ইডেন ই/এম বিভাগকে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাধিকারের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে এসি বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সচিবালয়ে এসি ব্যবহারে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। আবার যেসব এসি নষ্ট হয়েছে, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা হয়। নতুন এসি প্রয়োজনে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের কর্মপরিবেশ ঠিক রাখতে এসির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু এসি সংকটে অনেক যুগ্মসচিব ও উপসচিবের কক্ষে এসির ব্যবস্থা করা যায়নি। গরমের মধ্যে কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ খারাপ হয়। বর্তমানে সবাইকে এসি দিতে গেলে প্রায় ৪০০’র অধিক নতুন এসির প্রয়োজন রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব বলেন, শীতের মৌসুম শেষ, এখন তাপমাত্রা বাড়ছে। সেখানে এসি বিলাসি পণ্য হলেও বছরের পর বছর যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, সেখানে এসি ছাড়া কক্ষে বসে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েবে। কারণ রাজধানী যানজটের শহর। এখানে গরম পড়তে না পড়তেই গাড়িতে এসি ব্যবহার শুরু হয়েছে। কর্মকক্ষেও এসি লাগবে। সেজন্য আগেভাগেই এসি বরাদ্দ চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভবনে কয়েকটি কক্ষে উইন্ডো এসি লাগানো আছে। গত বছর এসব এসি পরিবর্তনে গণপূর্তে আবেদন করেছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় পর্যাপ্ত এসি কেনাকাটা সম্ভব হয়নি। এবার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো এসি পরিবর্তনের বাড়তি চাপ আসবে গণর্পূতের ইডেন ই/এম বিভাগের ওপরে।

সচিবালয়ে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘমেয়াদি এসি ব্যবহারে খারাপ প্রভাব পড়ে। ঢাকা শহরে ভ্যাপসা গরম অসহ্য হয়ে ওঠায়, এসি ব্যবহারের বিকল্প কোনো পথ নেই। গরম একেবারেই সহ্য করা যায় না। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রশাসনে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে বেড়েছে এবং সরকারি যন্ত্রের সেবামুখী প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, বিদেশি প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ সাধারণ জনগণ তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আসছেন। তবে সচিবালয়ে বর্তমানে যেসব কক্ষে এসির ব্যবস্থা নেই, সেখানে কর্মকর্তাদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসি বাইরের বাতাসকে কক্ষে প্রবেশ করিয়ে শীতল করছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার তিনভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে; প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং এসির বাইপ্রোডাক্টের মাধ্যমে। প্রতিটি এসি যদি এক বর্গফুট এলাকাকেও উত্তপ্ত করে তবে সচিবালয় এলাকাকে উত্তপ্ত করে দিচ্ছে। একটা বাসায় লাইট-ফ্যান দিয়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তার কয়েক গুণ বেশি খরচ হয় এসিতে। গরমে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে চাকরিজীবীদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে এসির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ প্রত্যেক বছরে গরমের তাপমাত্রা বাড়ছে। গরমের মধ্যে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। নির্ভরশীল সূত্রে জানা যায়, সচিবালয়ে প্রায় ২৮০০ এসির ব্যবস্থা রয়েছে। আর অর্থ ভবনে ১২০০ টনের সেন্টাল এসি দ্বারা আবদ্ধ। সুতরাং সচিবালয়ের কর্মপরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে গরমের মধ্যে এসি প্রয়োজন রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত