দ্বাদশে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন

পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে আউয়াল কমিশন

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই-আইআরআইসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী কমিশনের জন্য বাস্তবায়নের সুপারিশ রেখে যাবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা তাদের রিপোর্ট দেখেছি। ফরমালি বসতে পারিনি। আমাদের সময়ে জাতীয় নির্বাচন তো হবে না। কাজেই অনেক সময় আছে। প্রাথমিক রিপোর্ট আমরা দেখেছি। আমাদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। এখন সামারি করার জন্য বলা হয়েছে, যে তারা আমাদের ভালো দিক এবং দুর্বল দিক কী দেখেছে। ইসি সচিবালয় খসড়া করেছিল, আমরা বিস্তারিতভাবে আবার করতে বলেছি। এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী কমিশনের জন্য সাজেশন (পরামর্শ) রেখে যাব। আমাদের আমরা ত্রুটি দেখে ভবিষ্যতে সেটি দেখব।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, তারা টোটাল নির্বাচন নিয়ে মতামত দিয়েছে। প্রার্থী, দল, সরকার, ভোটকেন্দ্র নানা বিষয়ে কথা বলেছে। আমরা কেবল আমাদের দিকটা দেখব। তারা যে সুপারিশ করেছে সেটা করা যায় কি না সেটা আমরা দেখব। যেগুলো আমাদের জন্য করা সম্ভব সেগুলো পরবর্তী কমিশনের জন্য সুপারিশ রেখে যাব।

ভোটে কারচুপি নিয়ে মো. আলমগীর বলেন, তারা একটা (প্রতিবেদনের) জায়গায় বলেছে ভোটে কারচুপি হয়েছে বেশ কয়েকটা কেন্দ্রে, যেখানে কমিশন ব্যবস্থাও নিয়েছে। যদি বলত কমিশন অবহেলা করেছে, এমন তো বলেনি। তারা কমিশনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছু বলেনি, যে কমিশনের এমন সক্ষমতা ছিল অথচ ব্যবস্থা নেয়নি। অথবা কমিশন এখানে ভোটের এই সমস্ত কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট হয়েছে কিন্তু কমিশন বন্ধ করেনি, এমন কোনো রিপোর্ট নেই। বরং কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তাদের রিপোর্টে আছে। প্রশাসনে রদবদল করেছে এগুলোও আছে। এখন টোটাল গণতান্ত্রিক বিষয় তো আর নির্বাচন কমিশন দেখে না। তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে যা বলেছে আমাদের দৃষ্টিতে দেখিনি যে খারাপ কিছু বলেছে। আমরা সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে করেছি। কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে সেটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো ভোট বর্জন করে। এতে নির্বাচনিকালীন কিছু সহিংস ঘটনাও ঘটে। রেলে অগ্নি সংযোগে প্রাণহানি হয়। তবে ভোটের দিন তেমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি। অনেক শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে ফের সরকার গঠন করে।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মো. আলমগীর বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো আইন করে ডিজিটাল প্রচারের ব্যবস্থা এনেছে ইসি। আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেই প্রার্থীরা এই সুযোগ পাবেন। আর এতে কমবে প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয়। তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রচারের ব্যবস্থা করায় খরচ কমে যাবে। ইউটিউটে, ফেসবুকে প্রচারে ব্যয় কমে যাবে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে। সেগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা করেন এই কমিশনার।

অতীতে স্থানীয় এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করতে হলে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হতো। সংশোধনীতে সেই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছে।

মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন মানে হেলাখেলা বা ছেলেখেলা নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়, স্থানীয় সরকার পরিচালনার বিষয়। সেখানে নিয়ম করেছিল যেন যে কেউ চাইলেই প্রার্থী হতে না পারে। এজন্য প্রার্থী সমর্থনে স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান করা হয়েছিল। এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থি। এছাড়া যারা সমর্থন দেন তারা অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন। এই ধরনের অভিযোগ আছে। তাই আমরা সেটা তুলে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ওই বিধান প্রতিপালন করতে গিয়ে সমর্থন দেখানোর জন্য প্রার্থীরা ছলচাতুরি বা মিথ্যার আশ্রয়ও নিতেন। প্রার্থী নিজেই ডানহাত, বাম হাত মিলিয়ে স্বাক্ষর করতেন, তাই এই ধরনের আইন কেন থাকবে যা ন্যায়ের পক্ষে না। তাই তুলে দিয়েছি। এটা অন্যায় করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসির সচিব বলেন, কোনো দল থেকে প্রার্থী না দিলে স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে কারোই সমর্থনসূচক স্বাক্ষর লাগবে না। জেনে বুঝে শুনে গণতন্ত্র, রাজনীতির জন্য সহায়ক সেটা তো করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়। তাহলে তো সংসদেও করতাম।

স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করার বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই তৃণমূলে রাজনৈতিক নির্বাচন হয়। আমাদের এখানে সেটা আগে ছিল না। পরে এখানেও করা হয়েছিল। হয়তো ভালো দিক চিন্তা করেই করেছিল। এখন হয়তো তারা মনে করছে অপপ্রয়োগ বেশি হচ্ছে।

ইসি ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৮ মে থেকে চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।