সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম প্রধান আমল আল্লাহর জিকির। আল্লাহকে সর্বক্ষণ ধ্যানে জ্ঞানে স্মরণ করা। কুরআন ও হাদিসে এর অতুলনীয় গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। আজ আমরা এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদিসের বাণী সামনে আনব। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৫২) আল্লাহ পাক আরো বলেন : ‘তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।” (সূরা আহযাব : আয়াত-১) ‘তারা (জ্ঞানবান ব্যক্তিরা) আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়েও।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৯১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের বাগিচায় পায়চারি করতে আগ্রহী, সে যেন অধিক পরিমাণে জিকির করে। সকাল বিকাল আল্লাহর জিকির জিহাদের ময়দানে তুমুল লড়াই ও উদার মনে দান খয়রাত অপেক্ষাও উত্তম।’

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘যখন আমার বান্দা আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে, আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। আর যখন সে আমাকে সমাবেশে স্মরণ করে, আমি তাকে তদপেক্ষা উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি।’ নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন নিজ আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন আর কোনো ছায়া (আশ্রয়) থাকবে না। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো- ওইসব লোক, যারা নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং ভয় ও ভক্তিতে তাদের চোখ হতে অশ্রু বয়ে পড়েছে।’ (মুকাশাফাতুল কুলুব, ইমাম গাজ্জালী- পৃ-৪০৭-৪১১)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- ‘আল্লাহ পাক জিকির ব্যতীত এমন কোনো ফরজই আরোপ করেননি, যার পরিসীমা ও পরিমাণ নির্ধারিত নেই। নামায দিনে পাঁচবার এবং প্রত্যেক নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট। রমজানের রোযা নির্ধারিত কালের জন্য। হজ্জও বিশেষ বিশেষ স্থানে বিশেষ অনুষ্ঠানাদি ও সুনির্দিষ্ট কর্মণ্ডক্রিয়ার নাম। জাকাতও বছরে একবারই ফরজ হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর জিকির এমন ইবাদত, যার কোনো সীমা বা সংখ্যা নির্ধারিত নেই। বিশেষ সময়, কালও নির্ধারিত নেই। অথবা এর জন্য দাঁড়ান বা বসার কোনো বিশেষ অবস্থাও নির্ধারিত নেই। এমনকি পবিত্র ও অজুসহ থাকারও কোনো শর্তারোপ করা হয়নি। প্রতি মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর জিকির অধিক পরিমাণে করার নির্দেশ রয়েছে। সফরে থাকুক বা বাড়িতে থাকুক, সুস্থ থাকুক বা অসুস্থ, স্থল ভাগ হোক বা জলভাগ, রাত হোক বা দিন- সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরের হুকুম রয়েছে। (মাআরেফুল কুরআন, ৮খ. পৃ-১৮৬)

হজরত আবুদ্দারদা (রা) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন- ‘আমি কি তোমাদেরকে বলব না যে, তোমাদের কার্যসমূহের মধ্যে কোনটি উত্তম, তোমাদের প্রভুর নিকট অধিক পবিত্র ও তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে অধিক কার্যকর, সর্বোপরি তোমাদের পক্ষে সোনা-রূপা দান করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং একথা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ যে, তোমরা শত্রুর সাক্ষাৎ করবে এবং তাদের গর্দান কাটবে আর তারা তোমাদের গর্দান কাটবে অর্থাৎ জিহাদ? তাঁরা উত্তর করলেন, হ্যাঁ, বলুন হুজুর! তখন তিনি বললেন, আল্লাহর জিকির বা আল্লাহর স্মরণ। (মালেক, আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজা সূত্রে মিশকাত, হাদীস নং-২১৬২)

সকল আমল ও কাজের মূল হল অন্তরে আল্লাহর জিকির। তাই তা সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অন্তরকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করার অন্যতম প্রক্রিয়া হলো জিকির। উপযুক্ত পীর মুর্শীদের সাথে গভীর ভালোবাসা এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। জিকিরকরের মধ্যে ১০০’রও অধিক ফায়দা বা উপকার আছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

জিকির শয়তানকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে ও বিতাড়িত করে।

জিকিরকারী স্বয়ং আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়।

জিকির ক্বলব থেকে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর করে দেয়।

জিকির চেহারা ও ক্বলবকে আলোকিত করে।

জিকিরকরের দ্বারা রিজিক বৃদ্ধি পায়।

জিকিরকরের দ্বারা মোরাকাবার মহান যোগ্যতা অর্জিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত এহছানের মর্তবায় পৌঁছে দেয়।

জিকিরকারী আল্লাহর দিকে অধিক পরিমাণে রুজু ও নিবেদিত হয়।

জিকিরকরের দ্বারা আল্লাহর মারেফাতের এক বিরাট দরজা খুলে যায়।

জিকিরকরের দ্বারা আল্লাহ তা’আলা (জিকিরকারীকে) স্মরণ করার সৌভাগ্য লাভ হয়।

জিকির ক্বলবকে মরিচা হতে পরিচ্ছন্নতা ও ঔজ্জ্বল্য দান করে।

জিকির গোনাহসমূহ বিদূরিত ও বিনাশ করে।

জিকির বান্দাকে কিয়ামতের দিন অনুতাপ অনুশোচনা হতে রক্ষা করে।

জিকিরের মজলিস হলো ফেরেশতাদের মজলিস।

(সূত্র : জিকরুল্লাহর গুরুত্ব, মওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (র), পীর ছাহেব, বায়তুশ শরফ)