ঈদযাত্রা

মহাসড়কে যানবাহনের চাপে যানজট

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গ্রামের বাড়িতে ছুটছে মানুষ। এতেই বাড়তি গাড়ির চাপে ঢাকার চারপাশে সড়কের মুখে যানজট দেখা গেছে। ঢাকার প্রবেশমুখ শনিরআখড়া ও বের হওয়ার পথ গাবতলী ও গাজীপুর চৌরাস্তায় দীর্ঘ যানজট রয়েছে। যানজটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-গাবতলী-চান্দরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। গতকাল শুক্রবার সকালে মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজ থেকে দাউদকান্দি টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১০-১১ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ বাড়ায় দাউদকান্দি গৌরীপুর বাজার অবধি সম্প্রসারিত হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়া যাত্রীরা। একই অবস্থা দেখা গেছে গাবতলী, গাজীপুর চৌরাস্তা ও চান্দরায়।

দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, জুমার নামাজের সময় মহাসড়ক যানজটমুক্ত করতে পেরেছি। সকাল থেকে কাঁচপুর থেকে দাউদকান্দি টোলপ্লাজা অবধি যানজট ছিল, যা পরে গৌরীপুরেও প্রসারিত হয়। অন্যদিকে কুমিল্লা-লাকসাম সড়কে অর্থাৎ কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই বাগমাড়া থেকে লাকসাম বাইপাস অবধি থেমে থেমে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো যানজটে গাড়ি চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।

লাকসাম হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম ভুঁইয়া বলেন, জুমার নামাজের আগেই আমরা যানজটমুক্ত করেছি রাস্তা। বাগমারা বাজার ও লাকসাম বাইপাস এলাকায় মহাসড়ক একমুখী বলে এখানে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১০ বা ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর ধরা হয়েছে। এরমধ্যেই ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে এই দুই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্টপেজগুলোয় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। কিছু কিছু পয়েন্টে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, বোর্ড বাজার ও স্টেশন রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দূরপাল্লার বাসের পাশাপাশি লোকবাসগুলো সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। এতে পেছনে দীর্ঘযানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাদের আগে ছুটি হয়েছে, তারা গ্রামের বাড়ির পথে ছুটতে শুরু করেছেন। সকালেও একই অবস্থা দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে।

চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ুম মিয়া বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হলেও মাঝেমধ্যে একটা লেন বন্ধ রাখা হয়। এতে জয়দেবপুর থেকে ঢাকাগামী লেনে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহগামী সড়কের উড়ালসড়ক যেখানে নেমেছে, সেখানেও অবৈধ পার্কিং এবং যাত্রী ওঠাণ্ডনামার কারণে প্রায় যানজট হচ্ছে।

কাজল সরকার নামের এক বাসচালক বলেন, ওপর দিয়ে এসে যাত্রী নামানোর জন্য বাস থামাতে হয়। বাসস্ট্যান্ড নেই, তাই যার যেখানে খুশি, সেখানেই দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো ও নামানো হয়। এতে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল। ওই সড়কে থেমে থেমে যান চলছে। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যাত্রীবাহী বাসগুলো ইচ্ছামতো থামিয়ে যাত্রী উঠানোর ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে পেছনের গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারি ছুটি শুরু না হলেও গতকাল রাত থেকে ঘরমুখো মানুষ গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। যে কারণে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। শিল্পকারখানা ছুটি হলে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ, থানা-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক কফিল উদ্দিন বলেন, কারখানা ছুটি হবে আরও দুই-তিন দিন পর। তখন বাসে অনেক ভিড় হবে। তাই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়ি রংপুরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখনই বাস পেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভাড়াও আগের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। তারপরও তাদের পাঠিয়ে দিলাম। কারখানা ছুটি হলে আমার কষ্ট হলেও চলে যেতে পারব।

এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত রেকার রাখা হবে। যাতে যানবাহন বিকল হলে তা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। গত বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক ছিল। এবার চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দুটি উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় আশা করছি, এবার আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে ঈদযাত্রা।

চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হলেও শেষ মুহূর্তে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়েছে, যা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই এবার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি চন্দ্রার আশপাশে বসানো হয়েছে ৩২টি সিসিটিভি। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে ড্রোন। নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন সড়কে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পর্যবেক্ষণে বড় আকারে একটি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরার ছবি দেখে বোঝা যাবে, কী কারণে যানজট হচ্ছে। সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে। যাতে মানুষের ঈদযাত্রা যানজট মুক্ত হয়।