ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাশরের ময়দানে আমলের ওজন হবে

হাশরের ময়দানে আমলের ওজন হবে

‘আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে।’ (সূূরা রাআদ : আয়াত-৮)

সেদিন যে ভালোমন্দ কাজকর্মের ওজন হবে তা সত্য সঠিকভাবে হবে। তফসীরবিদ আলেমগণ বলেন : হাশরে দুইবার ওজন হবে। প্রথমে কুফর ও ঈমানের ওজন হবে। এর ওজনে মুমিন ও কাফের পৃথক হয়ে যাবে। এই ওজনে যার আমলনামায় শুধু ঈমানের কলেমাও থাকবে, তার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে এবং তাকে কাফেরদের দল থেকে পৃথক করা হবে। দ্বিতীয়বার নেকী ও পাপের ওজন হবে। তাতে কোনো মুসলমানের নেকী এবং কোনো মুসলমানের পাপ ভারী হবে এবং তদনুযায়ী তাকে প্রতিদান ও শাস্তি দেয়া হবে।

আমলের ওজন কীভাবে হবে : মানুষের ভালোমন্দ কাজকর্ম কোনো জড়বস্তু নয় যে, এগুলোকে ওজন করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় কাজকর্মের ওজন কীরূপে করা হবে? উত্তর এই যে, আল্লাহতায়ালা সর্বশক্তিমান। তিনি সবকিছুই করতে পারেন। দ্বিতীয়ত আজকাল বিশ্বে ওজন করার নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে, যাতে দাঁড়িপাল্লা, স্কেল, কাঁটা ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। এসব নব আবিষ্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে আজকাল এমন বস্তুর ওজন করা যায়, যা ইতিপূর্বে ওজন করার কল্পনাও করা যেত না। আজকাল বাতাসের চাপ, বৈদ্যুতিক প্রবাহও ওজন করা যায়। এমন কি শীত-গ্রীষ্ম পর্যন্ত ওজন করা যায়। এমনকি ভূমিকম্পের মাত্রাও ওজন করা হয়। এগুলোর মিটারই এদের দাঁড়িপাল্লা। যদি আল্লাহতায়ালা স্বীয় অসীম শক্তির বলে মানুষের কাজকর্ম ওজন করে নেন, তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই।

মহান স্রষ্টার এ শক্তিও রয়েছে যে, তিনি আমাদের কাজকর্মকে জড় আকার-আকৃতি দান করতে পারেন। অনেক হাদিসে আছে যে, বরযখ ও হাশরের ময়দানে মানুষের কাজকর্ম বিশেষ আকার ও আকৃতি ধারণ করে উত্থিত হবে। কবরে মানুষের সৎকর্মগুলো সুশ্রী আকারে তাদের সহচর হবে এবং অসৎকর্মগুলো সাপ-বিচ্ছু হয়ে গায়ে জড়িয়ে থাকবে।

কতিপয় নির্ভরযোগ্য হাদিসে আছে : হাশরের ময়দানে মানুষের সৎকর্মগুলো তাদের যানবাহন হবে এবং অসৎকর্মসমূহ বোঝা হয়ে মাথায় চেপে বসবে। ‘আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে’ কথাটি একান্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে, যাতে বাহ্যদর্শী মানুষ বুঝতে পারে যে, পরকালে আমলের ওজন সংক্রান্ত বিষয়টি কোরআন দ্বারা প্রমাণিত এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

যার নেকীর পাল্লা ভারী হবে, সে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে এবং যার নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তার স্থান হবে দোযখে। হাদিসে আছে, যদি কোনো বান্দার ফরজ কাজসমূহে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, তবে আল্লাহতায়ালা বলবেন, দেখ তার নফল কাজ আছে কি না, নফল কাজ থাকলে ফরজের ত্রুটি নফল দ্বারা পূরণ করা হবে।

পাল্লায় ভারী হয় এমন কিছু আমল : (১) হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর একটি হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী স্বীয় গ্রন্থের সমাপ্তি টেনেছেন, তাতে বলা হয়েছে : দু’টি বাক্য উচ্চারণের দিক দিয়ে খুবই হালকা; কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী এবং আল্লাহর কাছে অতিপ্রিয়। বাক্য দু’টি এই : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম’

(২) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন : সুবহানাল্লাহ বললে আমলের দাঁড়িপাল্লার অর্ধেক ভরে যায়, আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে বাকি অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়।

(৩) আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমলের ওজনের বেলায় কোনো আমলই সচ্চরিত্রের সমান ভারী হবে না।

(৪.) হযরত আবু যর গেফারী (রা)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন : তোমাকে দু’টি কাজের কথা বলছি- এগুলো করা মানুষের জন্য মোটেই কঠিন নয়; কিন্তু ওজনের দিক দিয়ে এগুলো খুবই ভারী হবে। (এক) সচ্চরিত্র (দুই) অধিক মৌনতা, অর্থাৎ বিনা প্রয়োজনে কথা না বলা।

(৫) ইমাম আহমদ কিতাবুয যুহদে হযরত হাযেম (রা)-এর রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিবরাঈল (আ.) আগমন করলেন। তখন এক ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদছিলেন। জিবরাঈল (আ.) বললেন : মানুষের সব আমলেরই ওজন হবে; কিন্তু আল্লাহ ও পরকালের ভয়ে কাঁদা এমন একটি আমল, যার কোনো ওজন হবে না। বরং এর এক ফোটা অশ্রুও জাহান্নামের বৃহত্তম আগুন নির্বাপিত করে দেবে। (মাযহারী)।

(৬) তাবারানী ইবনে আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি মৃত লোকের কফিনের সঙ্গে কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তার আমলের ওজনে দু’টি কীরাত রেখে দেয়া হবে। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে এই কীরাতের ওজন হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান।

(৭) তাবারানী জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : মানুষের আমলের দাঁড়িপাল্লায় সর্বপ্রথম যে আমল রাখা হবে, তা হবে তার পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণের ব্যয়রূপী সৎকর্ম।

(৮) ইমাম যাহাবী (রহ.) হযরত এমরান ইবনে হাসীন (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন- যে কালি দ্বারা দ্বীনি ইলমও শরয়ী বিধান সংক্রান্ত বিষয় লেখা হয়, তা এবং শহীদের রক্ত কেয়ামতের দিন ওজন করা হবে। তখন ওজনের ক্ষেত্রে আলেমদের কালি শহীদদের রক্তের চাইতেও ভারী হবে।

কেয়ামতে আমলের ওজন সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ আমাদের জীবনকে সে অনুযায়ী গড়ে তোলার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত