ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রা : স্রোত বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের

ট্রেন-বাসে উপচেপড়া ভিড়, চাপ নেই লঞ্চে
ঈদযাত্রা : স্রোত বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। সেই আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল রোববার বেশিসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। রাজধানীর দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

রাজধানী ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। হাতে-কাঁধে ব্যাগ, যাত্রীদের ছোটাছুটি, কাউন্টারের সামনে সংশ্লিষ্টদের হাঁকডাক আর সারি সারি গাড়ি সবই রয়েছে। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টার ঘুরে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই জানা গেছে। ঈদযাত্রার শুরুতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। আগের দিন-রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। বাসে তূলনামূলক ভিড় কম থাকলেও প্রতিটি ট্রেনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন ঢুকলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। ট্রেনের দরজা দিয়ে উঠতে না পেরে জানালা দিয়ে উঠছেন কেউ কেউ। মহাখালী এনার কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি চাকরিজীবী সজীব মিয়া বলেন, ময়মনসিংহ যাব। কাউন্টারের সামনে লাইনে আধা ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় রয়েছি। ভালোই ভিড় হচ্ছে। সৌখিন পরিবনের যাত্রী হাসিব বলেন, ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পরই সৌখিন পরিবহনের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ভালোই যাত্রী রয়েছে। ঈদের ভিড় এখন শুরু হয়ে গেছে। গাবতলীতে সরকারি চাকরিজীবী হাসান কবির জানান, সড়কের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অফিস থেকে ছুটির ব্যবস্থা করে পরিবার নিয়ে তিনি আগেই চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশে যানবাহনের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে কোথাও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়নি। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে।

মহাসড়কে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটার যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের প্রায় ৭০০ সদস্য। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, মহাসড়কে যানজট না থাকলেও গণপরিবহনের সংখ্যা কম, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

অন্যদিকে সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগেই যাত্রীদের টিকিট দেখা হচ্ছে। টিকিটের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র সাদৃশ্য রয়েছে কি না, তা চেক করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে তবেই যাত্রীরা নির্ধারিত গন্তব্যের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারছেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোটামুটি সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়েছে। এরই মধ্যে চালু হয়েছে ঈদ যাত্রার বিশেষ ট্রেন। ঈদের ফিরতি টিকিটও বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ট্রেনের টিকিট ছাড়া যাত্রীদের রেলস্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে প্রথমে টিকিট ছাড়া মানুষেরা স্টেশনের প্রবেশদ্বারে ভিড় জমাতে শুরু করেছিল। তাদের বারবারই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একসময় সব বিনা টিকিটের যাত্রী এক সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে স্টেশনে প্রবেশ করত, এখন সেই দৃশ্যপট বদলে গেছে। বিনা টিকিটের যাত্রীদের দৌরাত্ম্যে নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জানা গেছে, ঈদযাত্রায় দৈনিক ট্রেনে করে ঢাকা ছাড়ছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে সিটের যাত্রী ৩৩ হাজার ৫০০ জন। এ যাত্রীর অনুপাতে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটে সাড়ে আট হাজার যাত্রী যাচ্ছেন। এছাড়া ২৫টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে। এসব ট্রেনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।

জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সামিয়া আনসারি বলেন, ট্রেন যাত্রা নিরাপদ, সেজন্য আমার কাছে পছন্দের যাত্রা ট্রেন। অনলাইনে টিকিট কেটেছি। অন্যান্য বার ঈদের সময় ট্রেনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবার তেমন কোনো চাপ নেই।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মো. কাজল সরকার বলেন, ট্রেনে আসন না পেলেও একটি স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনেছি। তবে ট্রেনে তেমন কোনো ভিড় নেই। অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারছি, এমনটা আগে কখনও ঈদে দেখিনি।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, আগামী দুই দিন ট্রেনে যাত্রী চাপ আরো বাড়তে পারে। এজন্য অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। এখন পর্যন্ত যেভাবে টিকিট চেকের পর যাত্রীরা প্ল্যাটফরমে ঢুকছে, আশা করি সামনের দুই দিনেও সেটি থাকবে।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সবসময় রয়েছে। ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পেরেছি। আগামী দুই দিনও এমন সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।

যাত্রী বাড়ছে লঞ্চে : নৌপথে শুরুর দিকে যাত্রী কম থাকলেও এখন সদরঘাটে যাত্রীর বিচরণ বেড়েছে। লঞ্চের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কে যানজটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঈদকেন্দ্রিক যাত্রীদের চাপ বাড়বে। সেজন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ায় ঈদের আগে-পরে ছয় দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত