পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার দীর্ঘজীবি হওয়ার উপায়

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার সেবা ও সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিক হকদার কে? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন- তোমার মা। লোকটি জিজ্ঞাসা করল- তারপর কে? হুজুর (সা.) বললেন- তোমার মা। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাস করলেন। হুজুর (সা.) বললেন- তোমার মা। লোকটি চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করলে হুজুর (সা.) বললেন- অতঃপর তোমার পিতা তোমার সেবা ও সদ্ব্যবহারের হকদার। (বোখারি ও মুসলিম)।

ইবনে হিব্বান ও হাকেম হতে বর্ণিত ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত রয়েছে। অনুরূপ পিতা-মাতাকে যদি অসন্তুষ্ট করা হয় তাহলে আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন।’

হযরত আবু দারদা (রা.) বলেছেন- আমি হুজুর (সা.)-এর পবিত্র জবানে শুনেছি, তিনি বলেছেন : পিতা হচ্ছেন জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা, ইচ্ছা হয় তুমি সে দরজার হেফাজত কর, অথবা স্বেচ্ছায় তুমি তা ধ্বংস কর।’ (তিরমিজি)।

এক ব্যক্তি আরজ করল- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করব। আল্লাহর রাসুল জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার মা কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, হ্যাঁ জীবিত আছেন। হুজুর (সা.) ইরশাদ করলেন- তুমি তোমার মায়ের খেদমতে লেগে থাক, এখানেই তোমার জান্নাত।’ (তাবারানী)।

হুজুর (সা.) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি স্বীয় জীবনের দীর্ঘায়ু ও সচ্ছল জীবিকা কামনা করে, সে যেন পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে এবং আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করে। (মুসনাদে আহমদ)।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন- যে সন্তান পিতা-মাতার খেদমত করবে তাকে সুসংবাদ যে, আল্লাহতায়ালা তাকে দীর্ঘায়ু দান করবেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাকেম)।

হুজুর (সা.) ইরশাদ করেছেন- পাপাচার মানুষের রিযিকে ঘাটতি ও দরিদ্রতা আনয়ন করে। তকদীরকে একমাত্র দোয়াই ফিরিয়ে রাখতে পারে আর জীবনের দীর্ঘায়ু একমাত্র পিতা-মাতার খেদমতের দ্বারাই অর্জিত হতে পারে। (ইবনে মাজাহ)।

হাদিস শরিফে আরো বর্ণিত আছে, হুজুর (সা.) যখন মিম্বরের তৃতীয় সিঁড়িতে কদম রাখলেন, তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) বদদোয়া করে বললেন- যে সন্তান পিতা-মাতা উভয়কে বা যে কোনো একজনকে পেল, অথচ তাদের খেদমত করে নিজে জান্নাত লাভ করতে পারল না, তার প্রতি ধিক, সে বিতাড়িত হোক। আল্লাহর রাসুল বললেন- আমীন।

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে বললেন- ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পর তাদের জন্য আমার কি হক পালন করতে হবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন- তাঁদের পাপ মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া কর, তাঁদের কোনো অঙ্গীকার থাকলে তা এবং তাঁদের কৃত অসিয়ত পালন কর। তাঁদের বন্ধুবান্ধবদের সম্মান কর এবং তাঁদের আত্মীয় ও প্রিয়জনদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।

আবু দাউদ শরীফ ও ইবনে মাজাহয় বর্ণিত আছে- স্বীয় পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার কর তাহলে তোমার সন্তান-সন্তুতিও তোমার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।

মুকাশাফাতুল কুলুব কিতাবে ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন, বয়স এবং রিযিক বৃদ্ধি এই দু’টি বিষয়ে সফলতার জন্য প্রতিটি মানুষই সচেষ্ট। হাদীসে উল্লেখ আছে, একটি আমলের সওয়াব খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। তা হলো, আত্মীয়স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহার। আত্মীয়স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহারের কারণে কোনো কোনো লোক পাপী হলেও তাদের ধন-সম্পদে বরকত ও তাদের সম্মানে বরকত হয়। হাদীসে আছে, নিয়ম মাফিক সদকা আদায় করা, ন্যায় পথ অবলম্বন করা এবং পিতা-মাতার সহিত অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহার করা এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি উত্তম ব্যবহার দুভার্গ্যকে সৌভাগ্যে পরিবর্তন করে দেয়। তাতে হায়াত বৃদ্ধি হয় এবং কষ্টকর মৃত্যু হতে সে ব্যক্তি মুক্তি পায়। (ফাজায়েলে সদকা, ১খ. পৃ-২৭১)।