উন্মুক্ত প্রার্থিতায় শৃঙ্খলায় গুরুত্ব আওয়ামী লীগের

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কাটায় বিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তঃকলহ বাড়ছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। এবার উপজেলা ভোটে দলীয় প্রতীক না থাকায় বাড়ছে প্রার্থীর সংখ্যাও। প্রার্থীদের নিয়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। এরইমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় অনেক প্রার্থীই নির্বাচনে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। রোজা ও ঈদকে ঘিরে মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। আবার অনেক স্থানে এমপি-মন্ত্রীরাও অনুগতদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেন। কোনো কোনো উপজেলায় এমপিরা নিজের সন্তান, ভাই, শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়দেরও প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছেন।

জানা গেছে, এবার চারটি ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। অন্যদিকে আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল। উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি উন্মুক্ত ভোটে শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। অশংগ্রহণমূলক নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা হস্তক্ষেপ করলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো উপজেলায় নতুন কমিটি গঠন ও ভাঙা কিংবা দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করতে পারবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে গত ২ এপ্রিল মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয় আওয়ামী লীগ। নির্দেশনায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে। এ নির্বাচনে জনগণের মতামতের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসনও শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কেউ কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আওয়াম লীগের এই নির্দেশনা কাগজে-কলমে মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে প্রয়োগ চায় স্থানীয় প্রার্থীরা। তাদের মতে, দল একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এমপি-মন্ত্রীদের কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নেওয়াই উত্তম। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে না পারলে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। স্থানীয় এমপিরা প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে নিজ প্রার্থীর পক্ষে বিশেষ সুবিধা নিতে চাইবে। আওয়ামী লীগের এই নিদের্শনা শুধু কাগজে-কলমে যাতে সীমাবদ্ধ না থাকে। জানতে চাইলে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা সাগর হোসেন সোহাগ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উপজেলা পরিষদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমি দলের নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানাই। এই নিদেশনা বাস্তবায়ন হলে তৃনমূলের ভোটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে; ভোট দেবে। প্রার্থীরাও গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন। এতে অযোগ্যদের নির্বাচিত হ?ওয়ার সুযোগ থাকবে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ থাকবে না। এমপি-মন্ত্রীরা পছন্দের লোককে জেতানোর জন্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের কেউ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী তাদের পছন্দের লোক চাইতেই পারেন কিন্তু সবসময় তাদের সেই চাওয়া তো পূরণ হবে না। আমরা দেখব শুধু দলের স্বার্থ। দলের স্বার্থ রক্ষা করে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সবাইকে চলতে হবে।