অভিজ্ঞতা অর্জনের সন্ধানে সিইসি

রাশিয়ার পর এবার দক্ষিণ কোরিয়া সফর

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অভিজ্ঞতা অর্জনের সন্ধানের বিদেশে বেরিয়ে পড়েছেন। রাশিয়ার পর এবার দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন দেখতে গিয়েছেন তিনি। এসব সফরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে দেশে সুন্দর নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সূত্র জানায় ৪ এপ্রিলের নির্বাচন দেখতে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছেন সিইসি। ফিরবেন আগামী ১৩ এপ্রিল। ফলে তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সে দেশে ঈদুল ফিতর পালন করবেন। তার সাথে রয়েছেন ইসি সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম ও সিইসির একান্ত সচিব মো: রিয়াজ উদ্দিন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মো: শাহ আলম জানান, রিপাবলিক অব কোরিয়ার ন্যাশনাল ইলেকশন কমিশন (এনইসি) দেশটির ২২তম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচন দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানোয় সিইসি দেশটিতে গিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিমান ভাড়া, থাকাণ্ডখাওয়া, স্থানীয় যাতায়াতের ব্যয় বহন করবে এনইসি। আর অন্যান্য ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন দেখতে যায় দেশটির নির্বাচন কমিশনের খরচে। এ দেশের নির্বাচন দেখতেও এনইসিকে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেখতেও গিয়েছিলেন সিইসি। ফেডারেল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেশটিতে সফরে যান সিইসি। সেখান থেকে তিনি ফিরেছেন ১৯ মার্চ।

সফরকালে গত ১৪ থেকে ১৮ মার্চ ‘নির্বাচনি সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক মান’ শীর্ষক এক সম্মেলনে তারা অংশ নেন।

জানা যায়, সফরের সময় তাদের থাকা খাওয়ার ব্যয় বহন করে রাশিয়ার নির্বাচন কমিশন। আর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বহন করে। রাশিয়ার ভোট পর্যবেক্ষণ শেষে সিইসি সন্তষ্টি প্রকাশের কথা জানান।

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল অনুযায়ী দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনে পুতিন ৮৭ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। রেকর্ডসংখ্যক এ ভোট পেয়ে পঞ্চমবারের মতো রুশ প্রেসিডেন্ট হন তিনি। সাড়ে ৭ কোটির বেশি ভোটার তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নিকোলাই খারিতোনভ, নিউ পিপল দলের ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ এবং লিবারেল ডেমোক্রেটস-এর লিওনিদ স্লাতস্কি। তারা যথাক্রমে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও ৩ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

২০০০ সালে সর্বপ্রথম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পুতিন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদে টানা দুবার রাশিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।

এরপর ২০০৮–-২০১২ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ক্ষমতার সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন পুতিন। মেদভেদেভের সময় তিনি প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছর করেন।

জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করেছে ইসি। বর্তমান কমিশন আগামীতে স্থানীয় সরকারে নির্বাচন করবে। এসব নির্বাচন যাতে আরো ভালো ও সুন্দর করা যায়, সে কারণে বিদেশে ভোট পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছে সিইসি। আগামীতে অভিজ্ঞতা নিজেরা ভালো ভোট করে পরবর্তী কমিশনের জন্য প্রস্তাবনা রেখে যাবে কমিশন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম একটি নির্বাচন যা গত ৭ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিশপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সংসদ নির্বাচনে মোট ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১৯৭১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এই সকল সংসদীয় আসনের ফলাফল ৮ জানুয়ারি বেসরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, যে আওয়ামী লীগ ২২৩টিতে, জাতীয় প্রার্টি (জাপা) ১১টিতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টিতে এবং অন্যান্য দল যেমন ওয়াকার্স পার্টি-১, জাসদণ্ড১, কল্যাণ পার্টি-১ টিতে বিজয়ী হয়েছে।

নির্বাচন বিষেজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের মন্তব্য থেকে বুঝা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, সফল ও বৈধ বলে অভিহিত করেছেন যা গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর তারা এমন মন্তব্য করেন। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জিম বেটস বলেন, ‘আমি নির্বাচনকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরো যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রে ওয়াই শুতোভ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও হিশাম কুহাইল, গাম্বিয়া হাইকমিশনের মোহামাদু মুসা এনজি, স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে, ওআইসির নির্বাচনি ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকির মাহমুদ বান্দার, আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদি হাকিম মোয়ালিয়াম, দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ভিক্টর ওএইচ ও কানাডার চন্দ্রকান্ত আর্য। সংবাদ সম্মেলনে তারা রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে যে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার কথা তুলে ধরেন।

তাদের এই অভিজ্ঞতার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশর এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি অবাধ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিকট একটি মডেল হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয় তার তুলনায় বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় অনেক কম দেওয়া হয়। এই অল্প সময়েও বাংলাদেশের এতো বেশিসংখ্যক মানুষ ভোটে অংশগ্রহণ করে বিদেশি পর্যবেক্ষক দলকে এতোটাই তাক লাগিয়ে দেন যা মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক জিম বেটসের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ওঠে আসে।

এত অল্প সময়ে প্রায় ৪১.৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক জিম বেটস বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। অনেক দেশে ভোট সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্তহয়। তার মতে এতো অল্প সময়ে ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি কোনো অংশেই মুখের কথা নয়। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বিগ্রে এর মন্তব্যে চমৎকারভাবে ওঠে এসেছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা।

এই নির্বাচন সম্পর্কে আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বি গ্রে বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এটি ভোটার, পোলিং স্টাফ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের পেশাদারিত্ব ও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রে ১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের পর তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, একজন ভোটারও বা কেউ তার কাছে তাদের উদ্বেগ বা অভিযোগ জানাননি। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান পূরণ করেছে। আমি অত্যন্ত নিশ্চিত, নির্বাচন কমিশন সততার সঙ্গে পেশাদার কাজ করেছে। তার এই মন্তব্যে বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংঘটনের যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের যে প্রয়াস তার বাস্তব প্রমাণ খুব চমৎকারভাবে উঠে এসেছে।