পুনরায় হবে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র‌্যাম্পের নকশা

গাছ না কাটার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে সম্প্রতি নানা বিতর্কের জন্ম নিয়েছে। মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজে নগরীর বেশ কিছু শতবর্ষী গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।

বেশিরভাগই নেটিজেনসহ ও বুদ্ধিজীবি মহলের দাবি শতবর্ষী এ গাছগুলো যেন অক্ষত থাকে। নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে নগরায়নের দোহাই দিয়ে বিলীন হয়ে না যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর টাইগারপাসে গাছ কেটে কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণ না করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) নির্দেশ দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সম্প্রতি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এর আগে নগরের দ্বিতল সড়ক এলাকায় শতবর্ষীসহ ৪৬টি গাছ কেটে মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিডিএ। কিন্তু দ্বিতল সড়ক এলাকায় গাছ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে গত ১ ফেব্রুয়ারী আন্দোলন শুরু করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীরা। নকশা অনুযায়ী চট্টগ্রাম টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠাণ্ডনামার পথ) নির্মাণের কথা ছিল। এ সময় নির্মাণের পথে বহু শতবর্ষী গাছ থাকায় তা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরে বিভিন্ন মহলের চাপে এমন সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে ‘সিডিএ’। সংস্থাটি জানিয়েছে, র‌্যাম্পের পুনঃনকশা করা হবে। চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়েছে। তবে শেষ হয়নি বিভিন্ন স্থানে র‌্যাম্প নির্মাণ। এরই মধ্যে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে নকশা। এবার টাইগারপাস সড়কে র‌্যাম্প নির্মাণ করতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এজন্য ৪৬ গাছ ও পাহাড়ের ঢালু অংশ কাটতে চায় সংস্থাটি। এতে গাছ ও পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। সিআরবির গাছ কাটার বিষয়ে সিডিএ’র অবস্থান পরিবর্তন হয় বলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, র‌্যাম্পের পুনঃনকশা হবে। আপাতত ওই সড়কে র‌্যাম্পের কোনো কাজ হবে না। নকশাটি সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরা হবে। মতামত গ্রহণের পর সেটি চূড়ান্ত করা হবে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সিডিএ। এজন্য রেলওয়ের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেয়া হয়নি। র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ ও সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। এখন ৪৬টি গাছ কাটতে রেলওয়ের কাছে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। প্রায় এক মাস আগে বন বিভাগের কাছে গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছে সিডিএ। গাছ না কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণ না করতে মন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। এ বিষয়ে তিনি জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণের বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। গাছ কাটা পড়লে র‌্যাম্প নির্মাণ না করতে বলেছেন মন্ত্রী মহোদয়। এখন পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে এবং গাছ না কেটে কীভাবে র‌্যাম্প নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব। তবে এরপরও জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপককে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে আগ্রাবাদ ও টাইগারপাস এলাকায় দুটি র‌্যাম্প নির্মাণে ৩৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ভূমি ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা থেকে বিমানবন্দরমুখী আপওয়ার্ড র‌্যাম্প নির্মাণে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক থেকে দেওয়ানহাটমুখী আপওয়ার্ড র‌্যাম্প নির্মাণে ১৪ শতাংশ ভূমি ব্যবহারের কথা বলা হয়। সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশে দ্বিতল সড়কে সম্প্রতি ৪৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে সিডিএ। পরে এ বিষয়টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নাগরিক সমাজ ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ করে সিডিএকে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানায়। সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও বিবৃতি দিয়ে একই আহ্বান জানায়। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ উদ্বোধন করেন। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র‌্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড়ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। সিডিএ ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। মূল অংশের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি।