ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে

বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলকে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানির আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্রাজিলে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশটি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য আমদানি করলে ব্রাজিলের জন্য এটি আরো সাশ্রয়ী হবে।’

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকছে।

তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্যসহ আরো পণ্য আমদানি করতে পারে। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে মূলত : চিনি, সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি করে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।

তিনি বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিও ডি জেনিরোতে ২৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট গঠনে জি-২০ টাস্ক ফোর্সের চূড়ান্ত বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তার দেশের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার একটি আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।

মাউরো ভিয়েরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ব্রাজিল উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়।

ব্রাজিলের মন্ত্রী বলেন, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমপরিমাণ এবং উভয় দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি গাজা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, তার দেশও গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল একই মত পোষণ করে।

শেখ হাসিনা গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ইরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় এমনকি হাসপাতাল ও আশ্রয় কেন্দ্রে হামলায় নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও হামলা থেকে রেহাই পাননি।’

প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ হিসেবে ব্রাজিল প্রথম ১৯৭৩ সালের ১৫ মে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে ব্রাজিলের সহায়তা চেয়েছেন।

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত তার দেশের জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা-ব্রাজিল সামগ্রিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর

আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিল সফরের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত রোববার বিকেলে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান এ সম্ভাবনার কথা জানান।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই মন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে সামগ্রিক সহযোগিতা বিষয়ে টেকনিক্যাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম, ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, বাংলাদেশে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্ডো দিয়াস ফারসে এবং উভয় দেশের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। আমাদের মধ্যে খুব সফল আলোচনা হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক ব্রাজিলে রপ্তানি ক্ষেত্রে কর মওকুফ ও অন্য পোশাক রপ্তানিতে কর হ্রাসের অনুরোধ জানিয়েছি।

পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোনে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনসহ নানামুখী বিনিয়োগে এবং আইটি পার্কগুলোতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্রাজিলিয়ানদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী জানান, বৈঠকে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন কি পশ্চিমা এইড-ওয়ার্কারদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে ইসরাইলের তোয়াক্কা না করার সংকট নিয়েও কথা হয়েছে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রাজিল সফরের সম্ভাবনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা, এন্টার্কটিকা কাউন্সিলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের কাজ ও গবেষণার সুযোগদান এবং ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশকে ব্রাজিলের সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেন জানান হাছান মাহমুদ।

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরা তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। আগামীতে বাংলাদেশের সাথে ব্রাজিলের সম্পর্ক আরো বিস্তৃত হবে।

এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্রাজিল থেকে পশু আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শুল্কজনিত সুবিধা দিতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।

যৌথ সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরসঙ্গীসহ তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রদত্ত ইফতার ও নৈশভোজে যোগ দেন।

গতকাল সন্ধ্যায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সম্মানে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এফবিসিসিআই আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজে যোগদান শেষে রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরার ঢাকা ত্যাগের কথা।