১০টি নিষিদ্ধ হারাম কি কি

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

পবিত্র রমজান মাস বিদায়ের পথে। রমজানের এক মাসের সাধনায় মুমিন বান্দা কিছু বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করে। সেই যোগ্যতা বলে তারা নিষিদ্ধ হারাম বা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। আমরা এসব হারাম কাজের একটি তালিকা খতিয়ে দেখব। প্রথম হারাম আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করা। আল্লাহতায়ালার সঙ্গে ইবাদত ও আনুগত্যে কাউকে অংশীদার স্থির করা সর্বপ্রথম মহাপাপ শিরক, যা হারাম করা হয়েছে।

শিরক দুই প্রকার। প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন।

প্রকাশ্য শিরকের অর্থ, ইবাদত, আনুগত্য অথবা অন্য কোনো বিশেষ গুণে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহতায়ালার সমতুল্য অথবা তার অংশীদার সাব্যস্ত করা। প্রচ্ছন্ন শিরক হচ্ছে- নিজ কাজকর্মে ধর্মীয় ও পার্থিব উদ্দেশ্যসমূহের ক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যক্তি বা শক্তিকে চূড়ান্ত কার্যনির্বাহী সাব্যস্ত করা। লোক দেখানো ইবাদত, নামণ্ডযশ কুড়ানোর উদ্দেশ্যে দান খয়রাত এবং লাভণ্ডলোকসানের মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাব্যস্ত করা ইত্যাদি প্রচ্ছন্ন শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয় হারাম কাজ পিতামাতার সঙ্গে অসদ্ব্যবহার : কোরআনের নির্দেশ হলো, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তার মানে পিতামাতার অবাধ্যতা করো না। তাদের কষ্ট দিওনা। কোরআনে পাকে পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়াকে শিরকের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্য এক আয়াতে মাতা-পিতার আনুগত্য ও তাদের সুখ বিধানকে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের সঙ্গে সংযুক্ত করে বলা হয়েছে।

তৃতীয় হারাম : দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা

জাহেলিয়াত যুগে সন্তানকে জীবন্ত পূঁতে রাখা কিংবা হত্যা করার ব্যাপারটি ছিল সন্তানের প্রতি অসদ্ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিপ্রকাশ। কোরআনে নির্দেশ হল দারিদ্র্যের কারণে স্বীয় সন্তানদের হত্যা করো না। সন্তানকে শিক্ষা দীক্ষা না দেয়া এবং তার চরিত্র গঠন না করা, যদ্দরুণ সে আল্লাহ, রাসুল ও পরকালের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে এবং চরিত্রহীন ও নির্লজ্জ কাজে জড়িত হয়ে পড়ে, এটাও সন্তান হত্যার চাইতে কম মারাত্মক নয়।

চতুর্থ হারাম : নির্লজ্জতার কাজ : কোরআন মজিদে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘প্রকাশ্য হোক কিংবা গোপন, যে কোনো রকম অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না। আভ্যন্তরীণের অর্থ, যে ব্যভিচার গোপনে করা হয়। অভ্যন্তরীণ ব্যভিচারের ভূমিকাও প্রকাশ্য ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত। কুনিয়তে পর নারীকে দেখা, হাতে স্পর্শ করা এবং তার সঙ্গে প্রেমালাপ এবং ব্যভিচার সম্পর্কিত যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা, সংকল্প ও গোপন কৌশল আভ্যন্তরীণ ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত।

পঞ্চম হারাম : কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা : কোরআন মজিদের নির্দেশ হলো, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করোনা, তবে ন্যায়ভাবে।’ বিনা কারণে অর্থাৎ বিচারবহির্ভূত পন্থায় কোনো মুসলমানকে হত্যা করা যেমন হারাম, তেমনিভাবে কোনো অমুসলমানকে হত্যা করাও হারাম।

ষষ্ঠ হারাম : এতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা : কোরআন মজিদের নির্দেশ হলো, ‘এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, কিন্তু উত্তম পন্থায়, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়।’ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এতিম শিশুদের অভিভাবককে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, তারা যেন এতিমদের মালকে আগুন মনে করে এবং অবৈধভাবে তা খাওয়া ও নেয়ার কাছেও না যায়। অন্য এক আয়াতে অনুরূপ ভাষায়ই বলা হয়েছে যে, ‘যারা এতিমদের মাল অন্যায় ও অবৈধভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে।’ তবে এতিমদের মাল সংরক্ষণ করা এবং স্বভাবত লোকসানের আশঙ্কা নেই এরূপ কারবারে নিয়োগ করে তা বৃদ্ধি করা উত্তম ও জরুরি কর্মপন্থা। এতিমদের অভিভাকদের এ পন্থা অবলম্বন করা উচিত।

সপ্তম হারাম : ওজন ও মাপে ত্রুটি করা : কোরআন মজিদের নির্দেশ হল, ওজন ও মাপ ন্যায়ভাবে পূর্ণ করা। ‘ন্যায়ভাবে’ বলার উদ্দেশ্য, যে ওজন করে দেবে, সে প্রতিপক্ষকে কম দেবে না এবং প্রতিপক্ষ নিজ প্রাপ্যের চাইতে বেশি নেবে না।

দ্রব্য আদান-প্রদানে ওজন ও মাপ কম-বেশি করাকে কুরআন কঠোরভাবে হারাম সাব্যস্ত করেছে, যারা এর বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তিবাণী বর্ণিত হয়েছে। কর্মচারী ও শ্রমিকদের নির্ধারিত কর্তব্য কর্মে ত্রুটি করাও ওজন এবং মাপের ত্রুটি করার অনুরূপ। যে ব্যক্তি কর্তব্যকর্ম পূর্ণ করে না, সময় চুরি করে কিংবা কাজে ত্রুটি করে সেও উপরোক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। সে কোনো মন্ত্রী হোক, প্রশাসক হোক কিংবা সাধারণ কর্মচারী হোক অথবা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মে নিয়োজিত হোক না কেন।

অষ্টম হারাম : ন্যায় ও সুবিচারের বিপরীত করা : কোরআন মজিদের নির্দেশ হলো, তোমরা যখন কথা বলবে, তখন ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে, যদিও সে আত্মীয় হয়। কোনো ব্যাপারে সাক্ষ্য হোক কিংবা বিচারকের ফয়সালা হোক অথবা পারস্পরিক বিভিন্ন প্রকার কথাবার্তাই হোক সব ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় ন্যায় ও সত্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে কথা বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাক্ষ্য ও ফয়সালায় কারও বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা এবং কারও শত্রুতা ও বিরোধিতা সত্য বলার পথে অন্তরায় না হওয়া উচিত। যদি তা নিজের অথবা পিতামাতার ও আত্মীয়-স্বজনের বিপক্ষেও যায়।

নবম নির্দেশ : আল্লাহ সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা : কোরআন মজিদের নির্দেশ হলো, ‘আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং তা ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাক’। এর অর্থ ওই অঙ্গীকারও হতে পারে, যা রূহের জগতে অবস্থান করার সময় প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। তখন সব মানুষকে বলা হয়েছিল, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তখন সবাই সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল : নিঃসন্দেহে আপনি আমাদের পালনকর্তা। এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। আলেমগণ বলেন : নযর, মান্নত ইত্যাদি পূর্ণ করাও এ অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত।

দশম নির্দেশ : আল্লাহতায়ালার সোজা সরল পথ ছেড়ে এ দিক ওদিক অন্য পথ অবলম্বন করা হারাম : দশম নির্দেশ হল, শরীয়তে মুহাম্মদী আল্লাহর সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথে চল এবং অন্য কোনো পথে চলো না।