স্বস্তিতে কাটল ঈদ, উৎসবে পহেলা বৈশাখ

কর্মমুখী মানুষের বিড়ম্বনা

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে ছুটির ব্যবস্থা করায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক। একইসঙ্গে পহেলা বৈশাখের ছুটি বাড়তি আমেজ যোগ করে মানুষের মাঝে। তবে কর্মস্থলে ফিরার পথে যাত্রীরা বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়েন।

ঈদুল ফিতরের পাশাপাশি গত রোববার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে এবারের ঈদের ছুটির আমেজ। গতকাল অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমাসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলেছে। আর ছুটিতে যাওয়া মানুষরা কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরতে শুরু করেছেন।

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, এয়ারপোর্ট, সদরঘাট, মহাখালী, উত্তরা আব্দুল্লাপুর, গাবতলী ও যাত্রীবাড়ী বাস কাউন্টারগুলোয় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতর ও বৈশাখের ছুটি শেষে নাড়ি ছেড়ে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা ফের চিরচেনা শহরে আসছেন। এতে গত রোববারের তুলনায় গতকাল দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নামছেন।

ঈদের ছুটি শেষে সিলেট থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে নেমেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী কাজল সরকার। তিনি বলেন, সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় সিলেট শহর থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওয়ারে পৌঁছেছি। কিন্তু হানিফ ফ্লাইওয়ারে এসে গাড়ি যানজটে পড়ে। তখন ১ কিলোমিটারের পথে ১ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সিলেটের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো সাইনবোর্ড, শনিরআখড়া ও হানিফ ফ্লাইওভারের যানজটে পড়ে।

ঈদে হানিফ ফ্লাইওভারে যানজট বাড়তে পারে গত ২১ মার্চ বিআরটিএ’র একসভায় এমন শঙ্কার কথা বলেছিলেন পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তার সেই শঙ্কা পুরোপুরি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। হানিফ ফ্লাইওভারে ঈদের ফিরতি যাত্রারা যানজটের চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

অন্যদিকে ট্রেনের বিলম্বের কারণে যাত্রীরা সঠিক সময়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারছে না। গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রেনগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় কমলাপুর পৌঁছায় সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস। ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে থামার পর যাত্রীরা নেমে ছুটতে শুরু করেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এ সময় কুলিদের হাঁকডাক বেড়ে যায়। কয়েক দিন ফাঁকা থাকার পর কমলাপুর যেন ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে।

সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী আবু ফজল বলেন, ঈদের আগের দিন ঢাকা ছেড়েছি। এ জন্য এক দিন ছুটি বাড়তি নিয়েছিলাম। ট্রেনের যাত্রীচাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিড় ছিল ভালোই, অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। টাঙ্গাইল আসার পর অনেক মানুষ উঠেছে; বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি। এর আগে, সকাল ১০টায় পঞ্চগড় থেকে একতা এক্সপ্রেস কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়। এ ট্রেনেও যাত্রীদের ভিড় ছিল। একতা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, যাওয়ার দিন নিজের সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। তবে আসার সময় সেই কষ্ট হয়নি। ঢাকায় ফেরা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের জুনিয়র ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) আবু সুফিয়ান বলেন, ঈদের ছুটি শেষে সপ্তাহজুড়েই মানুষ ঢাকা ফিরবেন। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বেশি ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি ট্রেনই দেরি করে ঢাকায় ঢুকছে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোতে যাত্রীচাপ বেশি, ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী উঠছে। এ বিষয়ে কমলাপুরের স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১২টি আন্তনগর ট্রেন যথাসময়ে কমলাপুরে পৌঁছায়। আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ছাড়া কোনো ট্রেনেরই শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। বুড়িমারী এক্সপ্রেস পৌনে ৩ ঘণ্টা দেরি করে ঢাকা ছেড়েছে। এটি সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। আসছে দেরি করে, ছেড়ে গেছেও দেরি করে। এ ছাড়া একতা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট বিলম্ব করেছে। বাকি দু-একটি ট্রেনে ১০ থেকে ২০ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। তবে তা যাত্রীদের প্রাধান্য দিতেই।

পদ্মা সেতু হওয়ায় ঈদ যাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীর বাসিন্দারা বাসের পাশাপাশি লঞ্চে ঢাকায় ফিরছেন। পটুয়াখালী থেকে আসা মোহাম্মদ আনিস বলেন, জীবনে কখনও শুনছেন ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেনি? সরকার যাই নির্ধারণ করে দিক না কেন? কেউই তা মানেন না। তবে ফেরার পথে তেমন ঝামেলা হয়নি এটাই বড় কথা। সড়ক পথে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন এবং মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন শফিকুল ইসলাম। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। গতকাল সকালে তাকে কর্মস্থলে হাজির হওয়ার কথা। সেজন্য বাড়তি বাস ভাড়া দিয়ে হলেও ঢাকায় পৌঁছান তিনি। বাসের টিকিট না মিলায় অনেকে বাধ্য হয়ে ট্রাকে আসছেন। বগুড়ার সম্রাট তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ট্রাকযোগে ঢাকা পৌঁছান। খালি ট্রাকগুলো জনপ্রতি ৩০০ টাকায় যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে। বগুড়া ঠনঠনিয়ায় ঢাকা বাস টার্মিনালে শত শত যাত্রীর ভিড় থাকলেও যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত বাসের অভাব। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও যানজট। মেঘনা সেতুতে যানবাহনের ধীরগতির কারণে সেতু পার হতে ঘণ্টাব্যাপী সময় লাগছে। ফলে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি কাটিয়ে জীবিকার তাগিদে ফেরা মানুষগুলোর রাজধানীতে প্রবেশের সঙ্গে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তেমনি এক ভোগান্তির নাম যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। দূরপাল্লার বাস ছাড়াও লঞ্চঘাট থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যানবাহনের অভাব না থাকলেও ভাড়া চোখ কপালে ওঠার মতো। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা যে যার মতো মনগড়া ভাড়া নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছে।