ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে জার্মানের স্বৈরাচারী শাসক এডলফ হিটলারের চাইতেও ভয়ংকর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে সারা বিশ্বই বলতে গেলে একটা রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় হিটলারের যে দাম্বিকতা, যুদ্ধংদেহী মনোভাব ছিল সেটা আবারও নতুন করে বিশ্ব রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছি। হিটলার যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছিল ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করে, আজ সেই একই রূপে আবির্ভূত হয়েছে গাজায় গণহত্যার নায়ক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এই নেতানিয়াহু জাতিসংঘকে মানে না, হোয়াইট হাউজকে তোয়াক্কা করে না। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কথা শোনে না। সে হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে। ১৪ হাজার শিশুকে গাজায় এরই মধ্যে হত্যা করে ফেলছে।
তিনি বলেন, ইরানের আক্রমণের পর পৃথিবীর প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তুনেতানিয়াহু আবারও ইরান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। আপন ইচ্ছায় চলেন, যা খুশি করেন। যাকে ইচ্ছা তাকে মারেনও। ভাতে মারেন, পানিতে মারেন, এয়ার স্ট্রাইক করে মারেন। এটা পৃথিবীর ভয়ংকর চিত্র। তার দাপট মনে হয় হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ গণতন্ত্র সূচকে পিছিয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে বলব, আপনার দেশ গণতন্ত্র সূচকে কত ধাপ পিছিয়েছে?
দ্রব্যমূল্য সহনীয় অবস্থায় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিরল এফোর্ড’ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হয়েছে, অর্থ লেনদেনের যে গতিময়তা, তা আমাদের অর্থনীতিতে একটা গতিশীলতা নিয়ে এসেছে। সে সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। ব্যাংকিং খাতে লেনদেন বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর যে প্রয়াস তা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ পার্টি হিসেবে আমরা তার নির্দেশনা মেনে চলব।
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অনেকে অংশ নিচ্ছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা নির্বাচন হবে। সেখানে দলীয় প্রতীক থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ না করতে। নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়। কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনও কোনো প্রকার ইনজাস্টিস করবে না।
বিএনপি প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও আমাদের জানা মতে, স্থানীয় পর্যায়ে তাদের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচনের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত বড় একটা নির্বাচন, তাতে টুকটাক কিছু ঘটনা যে ঘটবে না, ঘটেনি। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনিকভাবে আমরা সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কতজন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কতজন প্রার্থী, আমরা সেটা হিসেব করে দেখার তাগিদ অনুভব করিনি। আমরা সবাইকে সুযোগ দিয়েছি।
জামায়াতে ইসলামী উপজেলা নির্বাচনে কাউকে না যেতে আহ্বান করেছে।
এ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কাদের বলেন, জামায়াতের আহ্বান নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া আমরা দিচ্ছি না।
এবার ঈদ পালন শেষে মোটামুটি স্বস্তিতে মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে পারছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।
