মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা

যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ফলে সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কনফ্লিক্ট যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেটি কীভাবে আমরা মোকাবিলা করব, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি; সেগুলোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন বিভিন্ন সেক্টরে যে ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, সেটি যেন সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে এক্সারসাইজ করে তা মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন। যার যার সেক্টরে সবাই যেন প্রস্তুতি নেয়। ক্রাইসিস তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, তখন কি করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার আওতায় জাপান সরকার মাতাবাড়িতে উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়ার জন্য উদ্বোধন করে গেছেন। মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এই পুরো কাজগুলো এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় থেকে করছে। সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। বোর্ডে অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ১৭ জন সদস্য থাকবেন। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে থাকবেন। সচিব বলেন, অথরিটির মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমি ব্যবহারের মাস্টারপ্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করা। যাদের ভূমি দেওয়া হবে, তারা যেন যথাযথভাবে কাজ করে। মূল লক্ষ্য হবে বিদেশি বিনিয়োগ। এছাড়া এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের নিট টাইম যেন কম হয়। তিনি বলেন, যে এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান হবে, সেখানে যেন পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। লবণ চাষ, পান ও চিনির চাষও যেন সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যেন ঘটে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে এটা করা হচ্ছে। কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে পুনরায় আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪ এর খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমান বেতন ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এর আগে এ আইনের ইংরেজি ভার্সন অনুযায়ী আমাদের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে। সেটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সচিব বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এখনও কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুমোদন পাওয়া ১৬টি আইন রয়েছে, যা এখনো আইন আকারে উপস্থাপনের জন্য সংসদে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চারটি আইন রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হলে কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, এখনও কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা বিস্তারিত আকারে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, যেসব আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়নি কেন, সে বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কবে নাগাদ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, তাও জানাতে বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলেও যেন তা মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়, সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।