বেড়েছে আরাকান আর্মির লড়াইয়ের তীব্রতা

পালিয়ে বিজিপির আরো ৬৮ সদস্যের বাংলাদেশে আশ্রয়

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে নেই গোলাগুলি ও গোলার বিস্ফোরণ। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। যার কারণে সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে মিয়ানমারের সেনা সদস্য ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পালিয়ে এসে একদিনেই নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ৬৮ জন সদস্য। এ নিয়ে গত ৩ দিনে ঢুকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ বিজিপির ৮৪ জন সদস্য।

গতকাল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি সদর দফতর) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ির রেজুপাড়া সীমান্ত দিয়ে দুইজন এবং জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১০ জন ঢোকেন। এরপর দুপুরে বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে আসে আরো ১ জন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে আরো পাঁচজন ঢোকেন। আর সবশেষ রাত ১১টার দিকে সীমান্ত পিলার ৪৪ এবং ৪৫ দিয়ে ঢুকে পড়ে আরো ৫০ জন। এ ৬৮ জনের মধ্যে বিজিপি ও সেনা সদস্য রয়েছে। তবে কোনো বাহিনীর কতজন সদস্য তা এখন বলা যাচ্ছে না। এদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এরা এখন নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে মোট ৮৪ জন পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে এই ২ সেনা সদস্য পালিয়ে আসেন।

রোববার (১৪ এপ্রিল) টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসেন বিজিপির আর ১৪ জন সদস্য। নতুন করে আসা ৩৪ জনই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওখানে আগে থেকে ১৮০ জন আশ্রয়রত রয়েছে। এনিয়ে মোট ২১৪ জন ওখানে রয়েছেন। আগে থাকা ১৮০ জনের মধ্যে গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরো ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য। এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরো ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এখনও থামেনি দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ। টেকনাফ সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে কিংবা রাতে চলছে গোলাগুলি ও গোলার বিস্ফোরণ। যা ওপার থেকে ভেসে আসছে এপারে। যার কারণে এখনও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তবাসীর।

এদিকে, গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইনে বোমা ও মর্টারশেলের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের আশপাশে গোলার শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

সীমান্তবর্তী পৌরসভার এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে এই সীমান্তে এতই গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাড়ির পাশে যুদ্ধ চলছে। মাঝখানে বন্ধ থাকলেও গতকাল সকাল থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

সীমান্তের বসবাসকারীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই ও গোলাগুলির শব্দে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্ষ্যংয়ের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উলুবনিয়া, জিম্মখালী ও নয়াবাজার, হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, পৌরসভার জালিয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হন সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ইয়াছিন বলেন, গতকাল সকাল থেকে সীমান্তের লোকজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। নাফ নদের সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সকাল থেকে সীমান্তে ভারী গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিনের তুলনার আজকের গোলার শব্দ বিকট।

এদিকে, মিয়ানমার মংডু ও বুথেডংয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যরা দিন-রাত নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবসময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোথায় কী হচ্ছে সেটা তো আমরা দেখছি না। তবে থেমে থেমে গোলাগুলি ও গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসছে। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।