দুবাইয়ের পথে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্তিপণের অঙ্ক নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর জলদস্যুর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে ‘এমভি আব্দুল্লাহ’। বহু জল্পনা-কল্পনা শেষে দস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে ২৩ নাবিক। তারা সবাই সুস্থ এবং অক্ষত অবস্থায় আছেন। শিগগিরই দেশে ফিরছেন। একই সাথে আলোচনা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ ছাড়াতে কত টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে। জাহাজটির মালিক পক্ষ বলেছে, মুক্তিপণ দিয়েই জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে। তবে কত টাকা দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে, তা বলা যাবে না। মুক্তির দিনই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে- এমভি আবদুল্লাহর মুক্তির জন্য জলদস্যুদের ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। রয়টার্স দুই দস্যুর বক্তব্যের বরাত দিয়ে রোববার এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান জানান, ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজটি ছেড়েছে জলদস্যুরা সংবাদটি কেউ স্বীকার না করলেও অবাস্তব নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জলদস্যুরা এত অর্থ চাইতেই পারে। এছাড়া জাহাজটির মুক্তিপণের অর্থ তো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পরিশোধ করেছে। এখানে মালিক পক্ষের পক্ষ হতে কোনো টাকা দিতে হয়নি। তারা চেষ্টা করেছে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। টাকার বিষয়টি হয়তো তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। জলদস্যুদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে রযটার্সের প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, জলদস্যুদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি লোকাল সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে নিউজ করেছে। কতজন জলদস্যু গ্রেপ্তার হলো, আদৌ জলদস্যু গ্রেপ্তার হয়েছে কি না, স্পষ্ট নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক প্রিন্সিপাল অফিসার জানান, বিমান থেকে টাকার ব্যাগ ফেলার ভিডিও আমি অনেক সময় ধরে দেখেছি। তিন দফায় তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ব্যাগের সাইজ দেখে আমার ধারণা প্রতিটি ব্যাগে ২ লাখ ডলার করে দেওয়া হলে টাকার পরিমাণ হয় ৬ লাখ ডলার। ধরে নিলাম আরো বেশি ১০ লাখ ডলার। ৫০ লাখ ডলার তিনটি ব্যাগে করে দিয়েছে আমার কাছে সঠিক মনে হচ্ছে না। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, আমরা আলোচনার মাধ্যমে জলদস্যুদের ম্যানেজ করে নাবিকদের ছাড়িয়ে এনেছি। আমরা কত টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়িয়ে এনেছি, তা কোথাও বলিনি। গত রোববার প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আবদি রাশিদ ইউসুফ নামে এক জলদস্যু বলেছেন, দুই রাত আগে টাকাগুলো আমাদের কাছে আনা হয়। সেগুলো জাল কি না, তা আমরা পরীক্ষা করে দেখি। এরপর আমরা টাকাগুলো দলের মধ্যে ভাগ করে সরকারি বাহিনীকে এড়িয়ে চলে যাই। ওই দস্যু জানান, সব নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজটিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মন্তব্যের আহ্বানে সাড়া দেয়নি সোমালি সরকার। এদিকে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম গারো অনলাইন জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড রাজ্যের পূর্ব উপকূল থেকে অন্তত আট জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পান্টল্যান্ড পুলিশ ফোর্সের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গারো অনলাইনকে জানান, তারা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে আটকে রাখা জলদস্যু দলের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন। সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মুক্তির খবর প্রকাশের পরপরই পরিবারে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। সোমালিয়ার স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের পর নাবিকরা মুক্তি পেয়ে জাহাজটি নিয়ে দুবাইয়ের দিকে রওনা দেন। মুক্তির খবর মুহূর্তে পৌঁছে যায় পরিবারে। মুক্তির খবরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হয়। স্বস্তি ফিরেছে স্বজনদের মধ্যে। নাবিক শামসুদ্দিন শিমুলের বোনজামাই বদরুল হক জানান, গত সোমবার বিকাল ৩টায় আমাকে ফোন করেছে শিমুল। বলল বেশ ভালো আছে। গোসলের যে সমস্যা ছিল সেই সমস্যা কেটে যাচ্ছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে দুবাই বন্দরে পৌঁছে যাব। মজুত পানিও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারছি। তাই সংকট অনেকটা কেটে গেছে। আমরা পানি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কবে দেশে আসছে জানতে চাইলে শিমুল জানিয়েছেন, আসলে দুবাই বন্দরে পৌঁছার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব পৃথকভাবে আসব নাকি জাহাজে করেই চট্টগ্রামে আসব। মালিক পক্ষ আমাদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। জাহাজের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক ভালো জানিয়েছে শিমুল। এ ব্যাপারে তিনি আমাকে জানান, আমরা রুটিন মেনে আগের মতোই জাহাজে দায়িত্ব পালন করছি। মুক্ত হওয়ার পর আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধজাহাজ এসকর্ট দিয়েছে। এখনো জাহাজের আশপাশে ওই জাহাজগুলোর এসকর্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার মনে হয়, দুবাই পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের আর কোনো নিরাপত্তা সমস্যা হবে না। নাবিক সাজ্জাদের বড় ভাই মোশাররফ মিয়া বলেন, রোববার বিকাল ৪টায় আমার মা’সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাজ্জাদ আমার ছোট ভাই। জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমরা খুবই চিন্তাই ছিলাম। মুক্তির পর আসলে আমরা খুশি। বলতে গেলে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সাজ্জাদ বলেছেন তারা দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছে। তাদের এসকর্ট প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য তারা খুবই নিরাপদ বোধ করছে।