ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উপজেলা ভোটে হস্তক্ষেপ

দলের নজরদারিতে এমপি-মন্ত্রীরা

দলের নজরদারিতে এমপি-মন্ত্রীরা

দলের নিদের্শনা উপেক্ষা করে যেসব এমপি-মন্ত্রী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন, তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া উন্মুক্ত প্রার্থিতার সুযোগে যেসব এমপি-মন্ত্রী পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলার ভোটে দাঁড় করিয়েছেন, তাদের ওপরও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

জানা গেছে, বিএনপিহীন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে কোনো একক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে এমপি-মন্ত্রীরা নিজ নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন এবং আজ্ঞাবহদের ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। বিভিন্ন সভায় নিজ প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে পরিচয় করাচ্ছেন। এ নিয়ে বেশ বেকাদায় ভোটে অংশ নেয়া অন্যান্য প্রার্থীরা। তারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছেন। এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দলের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন অনেক প্রার্থী। গেল ১৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন নরসিংদী পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ জাবেদ হোসেন। অভিযোগে বলা হয়, নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে আপন শ্যালক শরীফুল হককে পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেন। এছাড়া কয়েকটি বর্ধিত সভায় এবং নির্বাচনি এলাকার সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শরীফুল হককে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

এছাড়া এমপির প্রভাব খাটিয়ে ঘোড়াশাল পৌরসভা মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মুজাহিদ হোসেন তুষার প্রতিদিন শরিফুল হকের পক্ষে সভা, সমাবেশ ও শোডাউন করছেন। নেতাকর্মীদের শরিফুল হকের পক্ষে কাজ করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন। এমন অবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের দায়ে এমপি ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করেন সৈয়দ জাবেদ হোসেন।

শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে কঠোর বার্তা দেয় আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে বারবার বলে আসছে দলটি। দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন মন্ত্রী-এমপিরা। মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুুক্ত করতে তাদের পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এরই মধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের জানানো শুরু করে দিয়েছেন। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সভাপতির নির্দেশনার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে এমপি ও মন্ত্রীদের মধ্যে কাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা উপজেলায় নির্বাচন করছে, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এই দুই স্থানে সংসদ সদস্যের ছেলেরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এমপিরা সন্তানদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। এছাড়া দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককেও সতর্ক করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতাদের অভিমত ছিল- প্রতীক বরাদ্দের কারণে দলের তৃণমূল গ্রুপিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে এবার নির্বাচন থেকে প্রতীক বাদ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ভোটপর্ব শুরু হতেই দেখা যাচ্ছে এমপি ও মন্ত্রীরা নিজের সন্তান- নিকটাত্মীয়দের ভোটে দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এটা পছন্দ করছেন না দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি কঠোরভাবে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আমরা গতকাল সকালে ধানমন্ডির অফিসে বসেছিলাম। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর নির্দেশনাটি আমাদের অবগত করেন এবং নেত্রীর নিদের্শনা বাস্তবায়ন করতে দ্রুত তাগিদ দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত