ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এমভি আবদুল্লাহ দুবাই বন্দরে পৌঁছবে ২২ এপ্রিল

ভারত মহাসাগরের জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম

ভারত মহাসাগরের জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম

সোমালিয়ার জলদস্যুর কবল থেকে এক মাস পর মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখন দুবাই বন্দরের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে চলা জাহাজটি ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছার আশা করছে মালিক পক্ষ। এরপর ২৩ নাবিক পুরোপুরি মুক্তির স্বাদ পাবেন বলে মনে করছেন পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে ভারত মহাসাগরের অতি জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার করেছেন নাবিকরা।

গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) এই এলাকা পার হয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছেন তারা। নিরাপত্তায় রয়েছে ইতালির পতাকাবাহী একটি যুদ্ধজাহাজ। দুবাইয়ের ওই বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নেমে যাবেন দুই নাবিক। তারা বিমানে দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসবেন। বাকি ২১ জন নাবিক জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবেন। তবে নাবিকদের দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানিয়েছে মালিক পক্ষ।

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ নিয়ে আর কোন ভয় নেই। জাহাজটি এখন নিরাপ এলাকায় চলে গেছে। ২৩ নাবিক গত বুধবার ভারত মহাসাগরের জলদস্যু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করেছেন। এখন জাহাজটি সেফ জোনে চলে গেছে। যে গতিতে চলছে তাতে জাহাজটি আগামী ২২ এপ্রিল দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস করা হবে। এরপর নাবিকরা দেশে আসার প্রস্তুতি নেবেন।

মেহেরুল করিম বলেন, ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ার পর থেকে আমরা জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমাদের দীর্ঘ চেষ্টার পর জাহাজটি সহ ২৩ নাবিক অক্ষত অবস্থায় মুক্ত হয়। এর আগে জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় ২০ মার্চ দুপুরে দস্যুরা প্রথমবারের মতো আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর থেকে আমরা মুক্তি প্রক্রিয়া জোরদার করি।

তিনি বলেন, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষগত জটিলতা ছিল শুরু থেকেই। এরপর তাদের পক্ষে ইংরেজি জানা এক লোক যোগাযোগ করেছিল। এরপর দস্যুদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল দস্যুদের সঙ্গে আমাদের চূড়ান্ত সমঝোতা বা চুক্তি হয়। চুক্তিতে তৃতীয় কোনো পক্ষ ছিল না। আমাদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা হয়েছে। দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ এবং কীভাবে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা জানানো সম্ভব নয়। কারণ, জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের আইন মানা হয়েছে, যা হয়েছে সবই আইন মেনেই করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

কেএসআরএমের কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিপণ হিসেবে কত টাকা এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা সিক্রেট বিষয়। তবে মুক্তিপণ হিসেবে যে ৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ওই টাকার অঙ্ক সঠিক নয়। জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা যা করেছি, লিগ্যাল উপায়ে করেছি। নাবিকদের সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি- এটিই আমাদের বড় পাওয়া।

কম সময়ে জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ১৪ বছর আগে এমভি জাহান মণি নামে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল আমাদের আরো একটি জাহাজ। সেটি দস্যুদের কবল থেকে ছাড়াতে ১০০ দিন সময় লেগে যায়। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার অল্প সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিককে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সব নাবিক সুস্থ ও ভালো আছেন। নাবিকরা অক্ষত আছেন, এটাই আমাদের বড় পাওয়া।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানায়, জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে। ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত