ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে শেখ হাসিনা

বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়নি

* আওয়ামী লীগ প্রতিশোধপরায়ণ নয় * কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালুর পরামর্শ
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়নি

আওয়ামী লীগ প্রতিশোধপরায়ণ নয় দাবি করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি। তারা অপরাধ করেছে, তাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা।

গতকাল সকালে গণভবনে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি সব জায়গায় কান্নাকাটি করে বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার কথা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কিসের মামলা... অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা তারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। বাস, লঞ্চ, রেল পুড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কী হবে? ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা তো পলিটিক্যাল মামলা না, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে, ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা তারা ঘটাল নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে, রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে। যারা এগুলো করল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো তাদের মানুষ পূজা করবে? এসব মামলা দ্রুত শেষ করে শাস্তি দিয়ে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। আওয়ামী লীগ প্রতিশোধপরায়ণ না দেখে বিএনপি এখনো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ না দেখে তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারা দিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তারপরও বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি, আমরা মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে। বিএনপি কখনোই চায়নি এ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। তারা চেয়েছে অন্য দেশ থেকে ভিক্ষা করে দেশ চালাতে। বিরোধীদলে থাকার সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে তো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করি নাই। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। সারা দেশের জেলের সব অপরাধীই বিএনপির কি না এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপি যেভাবে বলছে ৬০ লাখ লোক তাদের গ্রেপ্তার, ৬০ লাখ তো ধারণক্ষমতাও নাই জেলে। তারপরও যতটুকু ধারণক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোক, এটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশে যত অপরাধ সব অপরাধ করে বিএনপি। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তারা চিৎকার করে তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। কী অত্যাচার হচ্ছে তাদের ওপর? জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচারের যে স্টিম রোলার চালিয়েছিল, যেভাবে হত্যা করেছিল, খালেদা জিয়া আসার পরে ২০০১-এর নির্বাচনের পর কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারেনি। ধরে নিয়ে যেভাবে অত্যাচার করেছে এবং আমাদের কতগুলো নেতাকে মেরে ফেলে দিল, আহসানউল্লাহ মাস্টার থেকে শুরু করে আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ওরা শুধু আওয়ামী লীগ না, ওরা মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সরকার কৃষকদের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণার পাশাপাশি কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ায় দেশের কৃষি সমৃদ্ধ হয়েছে। এক সময় যারা নুন ভাতের কথা বা ডাল-ভাতের কথা চিন্তা করতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংস ডিমের কথাও চিন্তা করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এক সময় বীজ উৎপাদন বিএডিসিসহ নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই কৃষি গবেষণায় জোর দেয়। বীজ, মাছ, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। তাই যার যতটুকু জমি আছে তাতেই চাষ করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করব। উদ্বৃত্ত থাকলে অন্যকে সাহায্য করব। কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করতে হবে। এটা করতে পারলে এবং যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে জীবনেও কোনো খাদ্যের অভাব হবে না। জাতির পিতার দেখানো পথে সমবায় কৃষি নিশ্চিত করা হলে দেশে কখনো খাদ্যের অভাব হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের একটাই লক্ষ্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করা। সরকার বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে। দেশের মানুষকে ভালো রাখতে বর্তমান সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ৭৫-পরবর্তী সময়ে যারা ছিল, তাদের মূল আগ্রহ ছিল ব্যবসা করা। যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করলেও দেশের মানুষের জন্য কিছু করেনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত