আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি

টনক নড়ছে এমপি-মন্ত্রীদের

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

দলীয় এমপি ও মন্ত্রীর কোনো আত্মীয়স্বজন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নির্দেশ না মানলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের এমন হুশিয়ারির পর টনক নড়ছে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে সেসব এমপি-মন্ত্রী বাধা দেবে তাদের ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান নেবে দলটি। উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে কোনো রকম ছাড় নয়- এই নীতিতে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। যারা উপজেলা পরিষদ ভোটে হস্তক্ষেপ করবে ভবিষ্যতে দলে তাদের পদণ্ডপদবির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং তাদরে ব্যাপারে কঠিন ও কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

সব মিলিয়ে এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের এই নির্দেশনা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছে উপজেলার ভোটে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের। তাদের মতে, দুয়েকজন এমপি-মন্ত্রী দলের নির্দেশনা মানলেও অনেকই গোপনে নিজের অনুসারী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। বিভিন্ন কৌশলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন। উপজেলা ভোট থেকে এমপি-মন্ত্রীদের নিবৃত করতে না পারলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কঠোর নির্দেশনার পর আত্মীয়-স্বজনদের ভোটে দাড় করানো এমপি-মন্ত্রীরা নমনীয় হতে শুরু করেছেন। উপজেলার ভোট থেকে নিজেকে দূরে রাখার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা। স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যারের জন্য কথাবার্তা বলছেন। নির্বাচন থেকে এমপি-মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের দূরে রাখতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রয়াশ চালাচ্ছেন। নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেই প্রচেষ্টায় কাজ করছেন তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দলীয় নিদের্শনার পর ইতিবাচক সাড়া মেলতে শুরু করেছে। অনেক স্থানীয় এমপি প্রভাব খাটানো থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে। এমপি-মন্ত্রীদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেওয়ার হবে না। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কঠোর ও কঠিন নিদের্শনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। উপজেলা ভোটে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন ভোটাররা।

প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা : নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইকে অপহরণ করে মারধরের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থীরা প্রত্যাহারের দলীয় নিদের্শনার পর গতকাল সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে যান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা, মারপিট ও অপহরণের ঘটনায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। লুৎফুল হাবিব রুবেলও নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনার পর নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা আওয়ামী লীগও; দিয়েছে কারণ দশার্নোর নোটিশ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস নোটিশে স্বাক্ষর করেন। নোটিশে বলা হয়, ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার (লুৎফুল হাবিব রুবেল) সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরনবিধি পরিপন্থীর সামিল। এ অবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।