ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি

বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাশিয়ার মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছে। গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় ফোর সিজনস হোটেলে এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো।

বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্নেল জেনারেল মি. আলেকজান্ডার ফোমিন এবং মস্কো সিটি গভর্নমেন্টের মন্ত্রী মি. সের্গেই চেরেমিন। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মস্কোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ষাটের অধিক দেশের রাষ্ট্রদূত, স্টেট ডুমার সদস্য, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেন।

সংবর্ধনা সভায় রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টে সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথরুদ্ধ হয়ে যায় বলে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আবারও উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় ফিরে এসেছে এবং জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন ২০৪১’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট ও উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিভিন্ন বাস্তবায়িত ও নির্মীয়মাণ মেগাপ্রকল্প কীভাবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বদলে দিচ্ছে, সে সম্পর্কে তিনি অতিথিবৃন্দকে অবহিত করেন। করোনার আগে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, সাম্প্রতিককালে রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরায় শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের বলিষ্ঠ ও টেকসই নীতি ও পরিকল্পনার ফলেই এসব অর্জন সম্ভব হচ্ছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে অধিকহারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্কের যে ভীত রচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৩ সালের সফরের মাধ্যমে তা আরো সুদৃঢ় হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. সার্গেই লাভরভের গত বছরের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে রাশিয়ার অঙ্গীকরণেরই সাক্ষ্য দেয় বলে আমি মনে করি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি ছিল বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতা। যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ১৯৭২-৭৪ সময়কালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাইন অপসারণ ও ডুবে থাকা জাহাজ উত্তোলনে তৎকালীন সোভিয়েত নৌবাহিনী যে সফল অভিযান পরিচালনা করে, এ বছর তার ৫০ বছর পূর্তিতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে তা উদযাপিত হবে।

মি. রুদেনকো গত ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রথম পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর করার ব্যাপারে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আগামী দিনে এর আকার ও পরিধি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন। তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ-রাশিয়া উভয়েই জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দুই দেশই একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প, বিনিয়োগ, পর্যটন ইত্যাদিবিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে স্থানীয় ও বাংলাদেশি বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের কারণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ঈদুল ফিতরের পরে আয়োজন করা হয়। এর আগে গত ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অংশগ্রহণে আরো একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত