দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ

২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আরো ৭ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে আজ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা স্বস্তি বোধ করছে।

গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান দাবদাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ৭ দিন ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস ও ঈদুল ফিতরের চলমান ছুটি বাড়িয়ে আরো সাত দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী তিন দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে আবহাওয়া অফিস। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল।

এই দাবদাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে আগামী সাত দিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আজ ফের ক্লাসে ফেরার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন এক সময় খোলার তারিখ পড়ে যায় যখন দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর উঠেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে করণীয় ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অভিভাবকরা বলে আসছিলেন এই গরমের মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। কারণ স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়তে হয়। এছাড়াও ঢাকায় প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থায় সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে স্বাভাবিক কারণেই ভয় পেতে হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন স্কুলে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে উঠতে হয়। এছাড়াও দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হয়। স্কুল ড্রেসের কারণে অনেকেই খোলামেলা পোশাক পরতে পারে না। এসবের সাথে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে। এছাড়া প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে বিশেষ করে দিবা শাখার শিক্ষার্থীদেরই বেশি কষ্ট। জুতাণ্ডমোজাসহ স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে যানবাহনে বা হেঁটে স্কুলে প্রবেশের আগেই ঘেমে অস্থির হয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। এই গরমের মধ্যে পিটি, কোথাও ভারি ব্যাগ নিয়ে বহুতল ভবনের সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে যেতে হয়। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফ্যান সুবিধাও নেই। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক আলো-বাতাসও পৌঁছায় না। আবার কোনো কোনো স্কুলের ক্লাসে জানালায় পর্দা না থাকায় সূর্যের তাপে বসেই ক্লাস করতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিও বাড়বে।

এদিকে আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম দাবদাহ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে শিশুদের স্কুলে পাঠাবেন কি না এমন চিন্তায় ছিলেন অভিভাবকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, বাচ্চাদের স্কুলে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালু রাখতে হবে। যেখানে ফ্যান নেই সেখানে হাত পাখা রাখতে হবে। আর যেসব স্কুলে এসি আছে সেটা চালু রাখতে হবে। সাথে ভেজা কাপড়, তোয়ালে দিয়ে দিতে হবে। যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামবে তখন শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। স্কুলের ব্যাগে জুস, পানি এবং তরল জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। কোনো শিশু তাপমাত্রাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে বা প্রেশার কমে গেলে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।