নির্বাচনে নেই বিএনপি

তবুও কেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ!

* তৃণমূলের সঙ্গে লন্ডনের যোগাযোগ নেই

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শেখ কুতুব আলী

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি- এমন সিদ্ধান্তের কথা আগেভাগেই জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সে অনুসারে বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সব পর্যায়ের নির্বাচন বর্জন করে আসছেন। লন্ডনে বসবাস করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনুরূপ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। প্রতিনিয়ত ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার নসিয়ত করেছেন।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক শো কিংবা যে কোনো আলোচনায় নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরছেন। সোজাসাফটা কথা বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। রবং নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছিল। নির্বাচনে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভোটকেন্দ্র, বাস ও ট্রেনে আগুন দিয়েছে। বিএনপি কোনো নির্বাচনে আসবে না এমনটি মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি কৌশল পরিবর্তন করে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সে প্রক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্ত রাখছে আওয়ামী লীগ। যে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। জমিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠ। এদিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা ভোটে এসেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপির অনেক নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর বিএনপির হ্ইাকমান্ড নড়েচড়ে বসে। শুরু হয়ে যায় অনুসন্ধান-বিএনপির কোন কোন নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে বিএনপি। তবে দলের যেসব নেতা এই নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ভোট বর্জনের নির্দেশ দিয়েছে দলটি। তাহলে কি ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সত্য প্রমাণিত হল। বিএনপির অনেক নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এমনি প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক দলীয় নেতাদের অনুরোধ করেছেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি দলীয়ভাবে ভোট বর্জন করলেও তৃণমূলে দলের ৪০ থেকে ৪৫ জন প্রার্থী ভোটে থেকে গেছেন। তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনুরোধ করেছেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেও নিয়েছেন। আজকের মধ্যে বাকিরা প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশা করছে বিএনপি।

এই প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজ করছেন। আমারও কেন্দ্র থেকে ফোন করে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। অনেকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন খুব বেশি নেতাকর্মী ভোটে নেই।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, আসলে এবার নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই, আমাদের উচিত ছিল ভোটে যাওয়া। এতে করে তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ত নির্বাচনি কর্মকাণ্ড ঘিরে। দলের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা ভোটে অংশ নিয়েছে তাদের সরে যেতে। সেই অনুযায়ী ভোটে অংশ নেওয়া নেতাদের ফোন করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করছি। এরপর যারা নির্বাচনে থেকে যাবে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। যদিও এতে দলের সাংগঠনিক শক্তির ক্ষতি হবে।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আসলেও কোনো কোনো নেতা স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভও করেছেন। দেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপির নেতারা অংশ নিচ্ছিলেন। তবে তারা সবাই যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না দলটি। তৃণমূল পর্যায়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের সঙ্গে কেন্দ্র কিংবা লন্ডনের কোনো যোগাযোগ নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

কেননা উপজেলা পর্যায়ের কোনো নেতা যদি কেন্দ্রের নির্দেশনা না অনুস্মরণ করেন তাহলে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে কীভাবে দল পরিচালনা করবেন সেই প্রশ্ন থেকে যায়। বাস্ততা হচ্ছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নয়াপল্টন ও লন্ডনের অফিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে হবে অন্যথায় দল পরিচালনা করা কঠিন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতার ঘাটতির কারণে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতারা হয়তো জানেনই না যে, বিএনপি আর কোনো দিন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।