ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ

সম্প্রসারণের অনেক সম্ভাবনা দেখেন ব্যবসায়ীরা

সম্প্রসারণের অনেক সম্ভাবনা দেখেন ব্যবসায়ীরা

কাতারের ভোক্তা বাজার ক্ষুদ্র হওয়ায় বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কম থাকলেও বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ আকর্ষণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এই পণ্যগুলো বাংলাদেশ কাতার থেকে আমদানি করে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানি করা হয় ২ হাজার ৩৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

কাতারের ভোক্তা বাজারের আকার ক্ষুদ্র হওয়ায় সেখানে ভোগ্যপণ্য রপ্তানির সুযোগও কম। ফলে বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হতে পারে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলেন, কাতারের জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে মূলত দেশের বাইরে তাদের যে বিনিয়োগ রয়েছে, তার দক্ষতার ওপর। কীভাবে কাতারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনা যায়, সেদিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আগের দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কাতারের আমিরের এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ১১ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে দ্বৈতকর পরিহার, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন-সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। এসব চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বাসসকে বলেন, কাতার থেকে আমরা মূলত জ্বালানি, সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করি। সেই তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ খুবই নগণ্য। কাতারের ভোক্তা বাজার ছোট। সুতরাং, আমরা যেসব ভোগ্যপণ্য তৈরি করি, সেগুলো সেখানে রপ্তানির সুযোগও কম। তবে কনস্ট্রাকশনসহ আরো বেশ কিছু সেবা খাতে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে; যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, কাতারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কম থাকলেও ওই দেশের বিনিয়োগ নিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক। সেখানকার উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাতে তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।

তিনি মনে করেন, আমাদের যে বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল রয়েছে, সেখানে কাতারের বিনিয়োগ আনার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক এবং শাসা ডেনিম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ মনে করেন, কাতার যদি বাংলাদেশি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সেদেশে ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ করে, তবে কাতারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা ওভারসিজ অফিস স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে সহজে পোশাক রপ্তানি করছে। কাতারে একই রকম সুবিধা পেলে, সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়বে।

তিনি বলেন, কাতার এখন আইটি ডেভেলপারদের ব্যবসায়িক সুযোগ দিচ্ছে। আমাদের উচিত সেই সুযোগ কাজে লাগানোর। তিনিও আশরাফ আহমেদের মতো মনে করেন যে, বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ টানার অনেক সুযোগ রয়েছে। শামস মাহমুদ বলেন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। কাতার বিনিয়োগ নিয়ে এ খাতে এগিয়ে আসতে পারে। এছাড়া তারা এখানে কোল্ড চেইন খাতে বিনিয়োগ, বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল ডেভেলপ ও ঢাকায় কাতার এয়ারলাইন্সের কার্গো হাব করতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বিষয়গুলো উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত