ফের বাড়ল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়বে কি না জানা যাবে কাল

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি অব্যাহত থাকবে না কি বিকল্প পদ্ধতিতে ক্লাস চলবে সে বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী জানান, রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ডে রয়েছে। আগামীকাল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এর মধ্যে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু আগামীকাল পর্যন্ত ছুটি আছে তাই আগেভাগেই কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে চায় না শিক্ষামন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ তিন দিন পর তাপমাত্রা কমবে কি না সেটারও নিশ্চয়তা নেই। পুরো এপ্রিল মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ চলমান থাকবে। মে মাসের শুরুতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে পারে। তবে সেটি ভিন্ন কৌশলে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সরাসরি স্কুল-কলেজে যেতে হবে না। তারা অনলাইনে ক্লাস করবে। তাপমাত্রা যদি কিছুটা কমে তবে মর্নিং শিফট চালুর চিন্তা রয়েছে। সব কিছুই নির্ভয় করছে আবহাওয়ার বুলেটিং ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ওপর। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ জাফর আলী গতকাল জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে বিভিন্ন রকমের ভাবনা রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। আমরা তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা যায় সে বিষয়ে ভাবছি। সেটা অনলাইন হতে পারে বা মর্নিং শিফটে হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে পরিস্থিতির ওপর।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল চলমান তাপপ্রবাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করে মাউশি। এর ফলে আগামী ২৮ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা।

এদিকে সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে আরও তিন দিন হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়িয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

গতকাল আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তাপপ্রবাহ নিয়ে জারি করা এক সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে আবহাওয়ার বাস্তবিক অবস্থা হচ্ছে চলতি এপ্রিল মাসের অবশিষ্ট কয়েকদিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং এই সময় বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রকৃতি দিন দিন রুক্ষ্ম হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামীকাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে শিশুদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করাই অভিভাবক ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নতুন করে আবহাওয়ার সতর্ক বার্তার মেয়াদ বাড়ানোর পর অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হবে নাকি আগামী রোববার থেকে আবার শিক্ষাদান কাযক্রম শুরু হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান পদ্ধতি তাপপ্রবাহ সহিষ্ণু করার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা না করে পাঠদান করার ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠানোর প্রক্রিয়ায়ও অভিভাবকদের সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল ড্রেস নাকি হালকা পোশাক পরিধান করে সন্তানরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সন্তানদের টিফিনের বিষয়টি নিয়েও অভিভাবকদের ভাবতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মটি জোরালভাবে বলবৎ করতে হবে।

ঈদুল ফিতরসহ অন্যান্য ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ২৮ এপ্রিল ক্লাস চালুর কথা রয়েছে। কিন্তু তাপদাহের সুখবর না আসায় ভাবনায় ফেলেছে শিক্ষাপ্রসানকে। তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য খাত নিয়েও ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। এই অবস্থায় চাপ কিংবা ঝুঁকি নিতে চায় না কেউ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র অপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আর জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ থাকবে।

আবহাওয়ার এই প্রতিকূল অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিসহ তাপপ্রবাহে সাত দিন ছুটি মিলে প্রায় এক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বাইরে। কাজেই পড়াশোনায় তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। এ বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গরমের কারণে যাতে তাদের ক্ষতি না হয় সেজন্য শ্রেণিকার্যক্রমের সময় কমিয়ে মর্নিং শিফট চালু করা কিংবা অনলাইনে ক্লাস চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব বিকল্প মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারা আরও জানান, হয়তো আগামীকাল এ ব্যাপারে নেওয়া সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসবে।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর দাবি তুলেছিল অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। ছুটি শেষ হওয়ায় এই ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় এবং হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। অনলাইনে শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনায় বন্ধের সময়ের শিক্ষার ঘাটতি পূরণে অনেকটাই সহায়তা হবে বলে মনে করেন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম সভাপতি।