ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কাল খুলছে স্কুল

ক্লাসে সন্তান পাঠানোর ঝুঁকি নেয়া কি সম্ভব!

ক্লাসে সন্তান পাঠানোর ঝুঁকি নেয়া কি সম্ভব!

দেশের ২৬টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গতকালের তাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। গতকার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ওবান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো-হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ। ফের তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে আগামীকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে। আগে জারি করা তিন দিনের হিট এলার্টের মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের হিট এলার্টের সঙ্গে সমন্বয় না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর সেই নিদেশনা অনুস্মরণ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত না নিলে হয়তো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিতনা। এমনটিই বোধগম্য হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামীকাল থেকে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষাথীদের বয়সের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের বয়স অনেক তফাৎ। মাধ্যমিক স্কুলের যে শিক্ষাথী প্রকৃতির যে প্রতিকুলতা সামাল দিতে পারবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেটা সহ্য করার সক্ষমতা নেই। প্রাথমিকের শিক্ষাথীরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাদের জীবন যাপনের ভাল-মন্দ বোঝার বোধগম্য এখনো পরিপক্ক হয়নি। সে কারণে তাদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশিন্তারও শেষ নেই। প্রাথমিকের শিক্ষাথীদের জীবনাচারনও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মতো নয়। প্রতিকূল আবহাওয়া কি তা তারা বোঝেনা। তাপপ্রবাহের ফলে স্বাস্থ্যগত কি ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়, সে ব্যাপারে তাদের সম্যক কোনো ধারণা নেই। অথচ তাদেরকে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হচ্ছে। তবে তাপপ্রবাহের কারণে কোনো শিক্ষাথী বিদ্যালয়ে না গেলে তাকে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না এবং মনিং শিফট চালু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেই ধরনের অবকাঠামোগত সামর্থ্য আছে কি না, সেটা মন্ত্রণালয় খোঁজ নিয়ে দেখেছে কি না, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে যে শিক্ষার্থী যেদিন বিদ্যালয়ে গেল না, সেদিন যে পাঠদান করা হয়েছে সেটি কি পুনরায় করা হবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অনেক জোয়ান-মর্দ যুবকও কাহিল হয়ে পড়ছে। সেখানে কলেজ কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা না হয় একটু শক্তি সামর্থ্য রাখে, তারা কোনো রকমে তাপপ্রবাহ সামাল দিতে পারবে। তবে প্রাথমিকের অবুঝ শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি সামাল দিবে, সেই সচেতনা গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকরা এ ব্যাপারে সচেতন তবে শিশু শিক্ষার্থীরা নয়। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ফের অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। থার্মোমিটারের পারদ ওঠে গেছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৯, খুলনা ও ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৫, কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ২, ফরিদপুরে ৪১ ডিগ্রি এবং ঢাকায় ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর জেলাসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, বান্দরবান ও নোয়াখালী জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিসের আজকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আগামীকালের আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে- সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজ থাকতে পারে। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, খুলনায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা এখনও বিদ্যমান। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আগের নয় বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই রেকর্ড এখনও ভাঙেনি। আগামীকাল থেকে খুলছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় যে শিখন ঘাটতি হয়েছে তা পূরণে আগামী ৪ মে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সেই হিসেবে আগামীকাল থেকে প্রাথমিক স্কুলও খুলবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। মূলত স্কুল খোলা ও বন্ধের ব্যাপারে সব সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই অনুসরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান জানান স্কুল খোলা-বন্ধের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুসরণ করা হয়। মাধ্যমিক স্কুল যেহেতু খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই প্রাথমিক স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে জানানো হবে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট বাচ্চারা পড়ে, তাই স্কুল খোলার ব্যাপারে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে, অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখা ও মর্নিং শিফট চালু করা। এছাড়া, যেসব শিশু এই সময়টাতে ক্লাসে আসবে না, তাদের অনুপস্থিত না দেখানোর বিষয়ে নির্দেশনা থাকতে পারে। এর আগে, গত ২০ এপ্রিল আলাদা বিবৃতিতে সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন সারা দেশে টানা তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমের তীব্রতা এতই বেশি যে, কয়েক দফায় সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। দাবদাহে সারা দেশে হিট স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিশুদের রক্ষার্থে স্কুল-কলেজ বন্ধের ঘোষণা দেয় দুই মন্ত্রণালয়। এদিকে, সারা দেশে নতুন করে আবারও জারি করা তিন দিনের হিট অ্যালাটের সময় আজ শেষ হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যেটি গত ৩১ মার্চ শুরু হয়ে এখনো চলছে। কখনো কখনো এটি অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাপপ্রবাহের এতটা ব্যাপ্তি আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এটিই দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ। এর আগে গত বছরও এপ্রিল মাসে টানা ১৯ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কোথাও কোথাও তা অতি তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এবার সেটা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিল মাসের টানা তাপপ্রবাহের এ ব্যাপ্তিকালকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন আবহাওয়াবিদেরা। এর আগে এ মাসে আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১৬ মার্চ প্রথম চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১৯ মার্চ তা আবার দূরও হয়ে যায়। পরে ৩১ মার্চ ফের রাজশাহী ও পাবনা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেই তাপপ্রবাহ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত চলছে। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ওপর দিয়ে টানা ২৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি ও ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। এটিই চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। ওই দিন দিনের তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক দিনে কিছুটা কমার পর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ফের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এ দুটি অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা তাপদাহে সিলেট ছাড়া মোটামুটি পুরো দেশেই জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তীব্র গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন কমছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান মার্চের শেষ দিকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেটি কোনো বিরতি ছাড়াই চলছে। এপ্রিলের বাকি দিনগুলোতেও তাপপ্রবাহে বিরতি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি আগামী মে মাসের ৩-৪ তারিখ পর্যন্তও এভাবে অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর হয়তো হালকা কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ ছিল না। কিছু বিরতি ছিল। গত বছর টানা ১৯ দিন তাপপ্রবাহ দেখেছি। এবার পুরো এপ্রিল মাস গড়িয়েও এর বাইরে যাচ্ছে। আজিজুর জানান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য মতে এর আগে এত দীর্ঘ মেয়াদে কখনো তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। একটানা এতদিনের তাপপ্রবাহ, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। এরই মধ্যে এটি সব রেকর্ড ভেঙেছে, কিন্তু এটি তো আরো চলবে। কমপক্ষে আগামী আরও ৪ থেকে ৫ দিন তো থাকছেই। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ বইছে, তবে মাঝখানে কোথাও কোথাও কিছুটা কমে গিয়েছিল। তিনি বলেন, এর আগে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৩ তিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। এরপর এ বছরই সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহ চলছে। আলাদা করে এপ্রিল মাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ সচরাচর হয় না। ‘অতীতে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে টানা এত ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই’- বলেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। এ অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীদের কীভাবে বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে, তা নিয়ে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। জীবনে শিক্ষা বড় নাকি সুস্থ থাকা দরকার। বিদ্যালয়ে গিয়ে যদি কোনো বাচ্ছা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তো স্কুলে নেই। যেতে হবে হাসপাতালে। আর হাসপাতালে যাওয়ার পথে যে গরম অতিক্রম করতে হবে, তাতে শিশু শিক্ষার্থীরা আরো অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেন না কি পাঠাবেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত