ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কর্মসূচি নিয়ে জাপায় উত্তেজনা

কর্মসূচি নিয়ে জাপায় উত্তেজনা

জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বর্ধিত ও রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির পূর্বনির্ধারিত পরিচিত সভাকে কেন্দ্র করে জাপায় ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রাজধানীতে দুটি পৃথক ভেন্যুতে আজ তাদের এই সভা হওয়ার কথা থাকলেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সভা স্থগিত করা হয়েছে। সারাদেশে বিদ্যমান তাপপ্রবাহের কারণে এই সভা স্থগিত করা হলেও জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা যথারীতি বহাল রয়েছে বলে গতকাল বিকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির পূর্বনির্ধারিত পরিচিত সভা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে তীব্র তাপপ্রবােেহর কারণে সভা স্থগিত করে পানি ও স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আজকের বর্ধিত সভা ডাকা নিয়ে গত কয়েক দিন দুটি গ্রুপের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। গতকাল দুপুরে বিজয়নগরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সংবাদ সম্মেলনে পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এই তীব্র দাবদাহে জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা তামাশার সামিল বলে মনে করি। তাই আগামীকালের (শনিবার) পরিচিত সভা স্থগিত করে পাঁচ দিনব্যাপী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ১০টি স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনসাধারণের মধ্যে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করব। তিনি বলেন, আজ অর্থনৈতিক ও ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বড় বড় ব্যাংকগুলো ছোট ছোট ব্যাংক গিলে খাচ্ছে।

আগে জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বলা হতো উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আর এখন বলা হয় কৃতদাস। এ পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এ পার্টিকে কীভাবে গুছিয়ে রাখা যায়। তিনি বলেন, হঠাৎ বড় লোক হওয়ার একমাত্র পথ রাজনীতি। জীবনে যাদের টিন ছিল না, তারা আজ প্রাডো জিপ চালায়। রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন। রাজনীতি নিয়ে অপরাজনীতি চলছে। এভাবে রাজনীতি শূন্য হলে দেশ ও রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কো-চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় পার্টিতে কী হয়েছিল তা জানাবেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নানামুখী সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সবিস্তারে ব্যাখ্যা করবেন বিরোধীদলীয় এই নেতা। আজ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে (রমনা) অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিয়েও নির্দেশনা দেবেন জিএম কাদের। জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেও বর্ধিত সভা করেছিলাম। এখন আবার করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় অনেকগুলো বিষয় আলোচনা করেছিলেন। সেসব বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দল নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে কথা বলবো।’ ‘কী হয়েছিল, সামনে কী হবে, আমাদের কী করণীয় এসব নিয়ে আলোচনা হবে বর্ধিত সভায়, জানান জিএম কাদের।

বিগত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির মনোনয়নবঞ্চিতদের দাবি ছিল, সরকারের সঙ্গে ‘সম্পর্ক করেই’ বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন জিএম কাদের। আসন নিয়েও সমঝোতা করেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রওশন এরশাদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে উদ্দেশ করে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এমন একজন আছেন, যার কাছে দলের চেয়ে বউ বড়’। অবশ্য এমন বক্তব্যের পরই দল থেকে বহিষ্কার হন বাবলা।

সর্বশেষ গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্টন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি অংশের সূচনা হয়। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রথমবারের ভাঙনের মুখে পড়ে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাপায় এ নিয়ে অন্তত ছয় বার বিভক্তি হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগে-পরে দল নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচনের সময় অনেক কিছু হয়েছে। সেগুলো আমরা মূল্যায়ন করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।’ তিনি বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতি না থাকলে কোনও দলই টিকবে না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্রও থাকবে না। অস্বাভাবিক রাজনীতির উত্থান হবে।’

চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন সাধারণ মানুষের নির্বাচনের উপর থেকে আস্থা কমে যাচ্ছে। এজন্য অনেকে অগ্রসর হয়েও আবার পিছিয়ে গেছেন। উপজেলা নির্বাচনে সীমিত পরিসরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করেন, ‘তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। দেখতে চাই সরকার কোনো পরিবর্তন করে কিনা। এটুকু আশা তো থাকতেই হয়। আশা ছাড়া তো মানুষ বাঁচতে পারে না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত