খুলল স্কুল : বাড়ল হিট অ্যালার্ট

পাঠদান নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক

* আজ ঢাকাসহ পাঁচ জেলার স্কুল বন্ধ * তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষেই অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা * অসন্তোষ অভিভাবকরা

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। পুণ্যভূমি সিলেট বাদে সর্বত্রই দাপট দেখাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বিশেষ করে দেশের ১১টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি। গরমের তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সামনের তিন দিনেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান। তাপপ্রবাহ চরম মাত্রায় বাড়লে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। মানুষের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে হতে পারে মৃত্যুর কারণ।

এদিকে তীব্র তাপদাহের কারণে আজ ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার (আজ) বন্ধ থাকবে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চাইলে খোলা রাখতে পারবে।

এদিকে চতুর্থ দফায় ফের তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান ড. শামীম হাসান মিয়া।

তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল শিক্ষা মন্ত্রাণালয়। তাপদাহের তীব্রতায় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাবিদদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারণ, এটি পড়াশোনাকে ব্যাহত করবে। পড়াশোনা যাতে ব্যাহত না হয়, এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার আহ্বান জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরাম নামে একটি সংগঠন।

তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অসহনীয় গরমে স্কুল খোলার দিনে অনেক স্থানে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাজধানীর ঢাকা, ফরিদপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রেণিকক্ষেই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা। এদিকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে মাওলানা মো. মোস্তাক আহমেদ কুতুবী আলকাদেরী (৫৫) নামে মাদ্রাসার এক শিক্ষক মারা গেছেন।

তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলায় অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে অভিভাবকরা। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সময় অনলাইনে ক্লাস হয়েছে, এখনো গরমের মধ্যে একই নিয়মে ক্লাস হতে পারে। তারপর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, তখন আবার সরাসরি ক্লাস হতে পারে। শিশুদের কথা বিবেচনা করে সরকার আরো অন্তত এক সপ্তাহ পর স্কুল খুলতে পারত। এতে হয়তো পড়াশোনার কিছুটা ক্ষতি হবে, গৃহশিক্ষক রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

তবে গতকাল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোনো জেলায় যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা যায়, সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আছেন, তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গার প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ও পাঠদানে সময়ও পরিবর্তন করতে পারেন।

এর আগে তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির পর্যায়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাংলাদেশে তো নতুন নয়।

সুতরাং, পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে যাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। শুধুমাত্র ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বিবেচনা করে সারাদেশের বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

স্কুল খোলার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিভাবকরা আলোচনা-সমালোচনা করছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এই আলোচনা-সমালোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না। আমাদের শিক্ষার্থীদের শিখন ফল অর্জন করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কারিকুলামের কাজ চলছে। তাই জনপ্রিয়তার নিরিখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, বাস্তবতার নিরিখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ঢাকা শহরের তাপমাত্রাই বাংলাদেশের তাপমাত্রা নয়। কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা যদি অসহনীয় পর্যায়ে যায়, তাহলে বিদ্যালয় সেখানে নিজস্ব পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমরা এমনো দেখছি, বিভাগীয় শহরে কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুলও বন্ধ করে দিয়েছে অভিভাবকদের চাপে। এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এই ধরনের মানসিকতা পরিহার করি। কিছু হলেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার এত আলোচনা কেন আসে? বাংলাদেশে কি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই? এখন সবকিছু খোলা থাকবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে এই প্রত্যাশাটি যথাযথ নয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কম। এ নিয়ে বাড়তি চাপ দেওয়া হচ্ছে না। যারা শ্রেণিকক্ষে আসছে না তাদের দেওয়া হচ্ছে হোম ওয়ার্ক। অনুপস্থিতির জন্য থাকছে না জরিমানাও। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে হবে শিক্ষার্থীদের। তাপদাহের তীব্রতায় বাড়ছে হিট স্টক। মরছে মানুষ। দেশের ইতিহাসে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।