ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রচারের বৈধতা আছে কি?

তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রচারের বৈধতা আছে কি?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া কোন অবস্থায় রয়েছে, সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ অবহিত নয়। তিনি কেন, কীভাবে, কোন শর্তে দেশ ছেড়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন; সেই প্রেক্ষাপট আদালত কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিতে রয়েছে। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, তারেক রহমান কেন লন্ডন বসে দেশের রাজনীতি করতেন চান। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তিনি সেগুলো আইন-আদালতের মুখোমুখি হয়ে মোকাবিলা করছেন না কেন।

তবে বিএনপির নেতারা এমন সব পরিস্থিতিতে নীরবতা পালন করছেন। অভিযোগ করা হয়- তারেক রহমান লন্ডনে বসে আয়েসি জীবনযাপন করছেন। তার নাকি অর্থকড়ির কোনো অভাব নেই। তার আয়ের উৎস কী? তবে কোথা থেকে তারেক রহমানের কাছে টাকা যায়, সে খবর কেবল গোয়েন্দা প্রতিবেদনেই হয়তো পাওয়া সম্ভব। তারেক রহমান দেশে আসবেন কি না, সে নিশ্চিয়তা কেউ দিতে পারছে না। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি দেশে আসার ঝুঁকি হয়তো নেবেন না। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তা হলে বিএনপির হাল ধরার মতো কোনো নেতা দৃশ্যত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান দেশে এসে দলের হাল ধরবেন কি না, সে ব্যাপারেও অনেকটা সংশয় রয়েছে।

তারেক রহমান নিরাপদ দূরত্ব বাজায় রেখে লন্ডন থেকে দেশের রাজনৈতি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ করছে। তারেক রহমান যেহেতু একজন পলাতক আসামি, সে কারণে তার বক্তৃতা বিবৃতি কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে বলে এত দিনে মানুষ জেনে আসছে। তবে কোনো কোনো গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর প্রকাশ করছে। তবে সেটা আইনগতভাবে প্রকাশ করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে আদালতের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে কি না? সে ব্যাপারে প্রচারণা নেই।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ করার পর আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতি বা নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। ফলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। তবে আসলে গণমাধ্যম তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে।

গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বৈঠকে অংশ নেন আইনজীবী নেতারা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক বিষয় ও সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ। বাংলাদেশের হাইকোর্ট আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একটি রিট আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এ আদেশ দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্যে দিয়ে বিতকিত হন। লন্ডনেই তিনি তার পিতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করেছিলেন।

কয়েকটি সভায় দেয়া বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশে অনেকগুলো মামলাও হয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে আদালত থেকে। পলাতক আসামি হিসেবে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ করা যাবে না আদালত এ নির্দেশনা দিয়েছে। এটি আইনগতভাবে মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করেছিলেন বিএনপির আইনজীবিরা। বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম বিচারপতিদের অন্যতম, লর্ড ডেনিংয়ের সেই উক্তি ‘তুমি যত বড়ই হও না কেন, আইন তোমার চেয়ে বড়।’

তারেক জিয়া পলাতক আসামি হওয়ার কারণে মহামান্য হাইকোর্টে এই মর্মে একটি আবেদন করা হয়েছিল যে, তার কোনো বক্তব্য, ভাষণ যেন বাংলাদেশের কোনো মাধ্যমেই প্রচার করা না যায়। প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সংসদ সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খাতুন, সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামানসহ আরো কয়েকজন মহামান্য হাইকোর্টে ওই দরখাস্তটি উপস্থাপন করলে হাইকোর্ট এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন যে, তারেক জিয়ার কোনো ভাষণ, বক্তব্য, মন্তব্য কোনো প্রক্রিয়ায়, কোনো মাধ্যমে এবং কোনোভাবেই প্রচার করা যাবে না। ওই আদেশ এখনো বলবৎ থাকায়, যেসব ব্যক্তি তারেক জিয়ার উল্লিখিত ভাষণ জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রচারে সহায়তা করেছে, তারা সবাই মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাপূর্ণ আদেশ ভঙ্গের অপরাধে অপরাধী, যার জন্য তাদের সাজা হতে পারে। যারা তারেক জিয়ার বক্তব্য প্রচারে সহায়তা করছে, তারা একজন পলাতক আসামিকেই পালিয়ে থাকতে উৎসাহিত করছে। এছাড়া যারা তারেক জিয়ার এহেন অপরাধমূলক কার্যকলাপ দেখেও নীরবতা অবলম্বন করছেন, তারাও পরোক্ষভাবে এবং সম্ভবত নিজেদের অজান্তেই তারেক জিয়াকে উৎসাহিত করছেন। বেকার তারেক রহমান কীভাবে যুক্তরাজ্যে বহু কর্মচারী নিয়ে, দামি গাড়ি ব্যবহার করে, অত্যন্ত দামি এলাকায় রাজপ্রাসাদতুল্য বাড়িতে বসবাস করে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, সন্তানকে উঁচু বেতন দিয়ে পাবলিক স্কুলে পড়ান, তিনি কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছেন, তার টাকা পাচারের উৎস এবং পদ্ধতি বের করার জন্য কার্যকর তদন্ত অতি প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রচার করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত