টানা তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ মানুষ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের

* হাইকোর্টের আদেশে অসন্তুষ্ট শিক্ষামন্ত্রী, যাবেন আপিলে * আজ ২৭ জেলার স্কুল- কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইমলাম অমর

রেকর্ড টানা তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ দেশবাসী। দিন দিন প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে রাজধানীসহ সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীও যোগ হচ্ছেন। গরমে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালগুলোয় গরমজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা বেশি থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। অল্পতেই মানুষ প্রচণ্ড ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এরকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে গত সপ্তাহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে গত রোববার থেকে খুলে দেয়া হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল সোমবারও এমন ঘটনা ঘটে। এর পরই চলমান তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সব শ্রেণির ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাসচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত এ আদেশ দেন।

গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন তুলে ধরে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মনির উদ্দিন। তিনি জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিক পরীক্ষা এই আদেশের আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে, গরমের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে হাইকোর্টের এমন আদেশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নিদের্শনা নিয়ে আসতে হবে? হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান তিনি।

এ সময় সাংবিধানিকভাবে যার যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করা বাঞ্ছনীয় বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। গত রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন- সংবাদমাধ্যমে আসা এমন খবর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাকি অন্যত্র ছিলেন তাও দেখার বিষয়। মন্ত্রী বলেন, স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়? যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই।

এর আগে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর ছুটি ঘোষণা নির্বাহী এখতিয়ার। কদিন ছুটি থাকবে বা থাকবে না এটা একটা বিশেষায়িত বিষয়। এটা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নয়।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আজ মঙ্গলবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৮ জেলা, ঢাকা বিভাগের ৬ জেলা, রংপুরের ২ জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের এ তথ্য জানিয়েছেন।

আবুল খায়ের জানান, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।